|| অন্যদেশ ডেস্ক ||
করোনা প্রকোপের মধ্যেই চীনে বাড়ছে জাতীয়তাবোধ। চীনারা হয়ে উঠছেন বিদেশিদের প্রতি অসহিষ্ণু। আর এতে তা দিচ্ছেন খোদ দেশটির রাষ্ট্র। দেশটির সরকার ইতোমেধ্যেই করোনাভাইরাস মোকাবেলা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শ্রেষ্ঠত্বকে ফেরি করতে শুরু করেছে।
দেশটির রাস্ট্র ও ক্ষমতাসীন দলের এমন কর্মকান্ড চীনাদেরকে করে তুলছে বর্ণবাদি। আর দেশপ্রেমের নামে উসকে দিচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবোধকে। এরইমধ্যে এর শিকার হতে শুরু করেছে চীনে দীর্ঘ বছর ধরে থাকছেন ব্যবসাবাণিজ্য করছেন এমন সব বিদেশিদেরকে।
এদেরই একজন কঙ্গোলীয় ব্যবসায়ী ফেলি মোয়ামবা। ১৬ বছরের বেশী সময় ধরে তিনি থাকছেন এই দেশটিতে। এখন তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তার এপার্টমেন্টে, শিকার হতে হচ্ছে চীনাদের গালমন্দের।অথচ আফ্রিকান এই ব্যবসায়ী এতোদিন ভেবে এসেছেন চীন তার দ্বিতীয় বাড়ি। তিনি ভালবেসে ফেলেছিলেন এই দেশটিকে। অনেক চীনা বন্ধুও হয়েছিল তার। আর এখন কিনা তারাই তাকে গালমন্দ করছেন, বলছেন দেশে ফিরে যেতে।
শুধুই আফ্রিকান বলে চীনারা তাকে করোনার বাহক ভাবতে পারে, এই শঙ্কা থেকে গোটা সময়টা তিনি নিজেকে রেখেছিলেন ঘরবন্দি। তারপরও চীনারা তার সঙ্গে যা করেছে , করছে তা ভাবা যায় না –মোয়ামবা জানালেন ফোনে। বললেন, ‘আমরাতো পশু নই।’
চীনের উহানে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তবে চীন কিছুটা হলেও রাশ টানতে পেরেছে এর বিস্তারকে। আর সেই সাফল্যই তাদেরকে করে তুলছে উগ্রজাতীয়বাদি। তারা এখন সহ্য করতে পারছে না বিদেশিদেরকে। অথচ চীনাদের এমন আচরণ গেল কয়েক দশকেও দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র্রে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না রীতিমত উৎসবে মেতেছে চীনারা। বিদেশিদেরকে ময়লার বিনে ফেলা হচ্ছে এমন কার্টুন এঁকে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে উত্তর চীনের একটি রেস্তোরাঁর সামনে।
দেশটির দক্ষিণের শহর গোয়াংঝো, যেখানে মোয়ামবার মত অনেক আফ্রিকানদের বাস। যাদের বেশীর ভাগই ব্যবসায়ী। সেই আফ্রিকানদেরকেই এখন বাধ্য করা হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে।
আর এসবে মদদ দিচ্ছে খোদ দেশটির রাষ্ট্র ও সরকার। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কারণেই এই সংক্রমণ সফলভাবে সামাল দেওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি চীনই এই ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী বিদেশিদের এমন অভিযোগও প্রচার করা হচ্ছে বেশ ফলাও করে। এমন সব প্রপাগান্ডার মধ্য দিয়ে বিদেশিদের প্রতি আক্রমণাত্মক করে তোলা হচ্ছে চীনাদেরকে।
তবে চীন সরকারের এমন নীতিপদ্ধতি আখেরে খুব ভাল ফল দেবে না জানিয়ে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেসিকা চেন ওয়েইস বললেন,‘উগ্র জাতীয়তাবোধের এই চর্চ্চাকে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো তাদের জন্য চীনের দিক থেকে হুমকি বলেই ধরে নেবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।’
চীনা জাতীয়াতবাদ নিয়ে পড়াশুনা করিয়ে এই অধ্যাপক মনে করেন, পার্টির ক্ষমতাকে আরো সংহত করতেই এই ধরণের উগ্রতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিনের জন্য হয়তো এটি সরকারের জন্য ভাল ফল বয়ে আনতে পারে। এমনকি এ্রই ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে সরকার জোরালো কোন ব্যবস্থা নেয়নি, এমন অভিযোগ হয়তো সামাল দেয়া যাবে। কিন্তু এমনটা চলতে ও চালাতে থাকলে আগামীতে চীনকে হয়তো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও পড়তে হতে পারে। এমন ভাবনাও দানা বাঁধতে পারে যে, বিশ্বনেতা হিসেবে নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবে তুলে ধরার জন্যই চীন সরকার এই মহামারিকে কাজে লাগিয়েছে।
ইতোমধ্যেই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে এমন দেশগুলোও চীনের এই উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ নীতিকে ভালভাবে নিতে পারছে না। বিশ্বস্থানীয় ব্যবসায়িরাতো রীতিমত হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন চীন সরকারকে এই বলে যে, চীনে এখন যা করা হচ্ছে তা কারো জন্যই ভাল হবে না।
সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় অন্যদের সমালোচনা করলেও গেল মাস থেকেই চীনে কোন বিদেশিকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি কর্মকর্তারা বেশ জোর দিয়েই বলছেন, এখন চীনে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন সেগুলোর বেশীর ভাগই বাইরে থেকে আসা। আর সরকারে এমন বলা থেকেই দেশটিতে বাড়ছে বিদেশি বিদ্বেষ। অথচ করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে যারা চীনে এসেছেন তাদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক।
এরপরও অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বেইজিং ও সাংহাইয়ের মত শহরগুলোতেও বিদেশিদেরকে দোকান ও জিমে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ঝেজিয়াং প্রদেশের ওয়াইউ শহরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী লাকি ডেসটিনি। বললেন, গেল দুই সপ্তাহে তিনি যেখানেই গেছেন চীনার হয়তো নাক ঢেকেছেন, না হয় দূরে সরে গেছেন। দোকানীরা তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি বাসে উঠলে অন্য যাত্রীরা নেমে গেছেন বাস থেকে। এমন পরিস্থিতিতে তাকে খাবার কিনতে হচ্ছে রাতে, যখন কিনা রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। পরিস্থিতি যদি এমনি চলতে থাকে তাহলে হয়তো তাকে দেশে ফিরে যেতে, বললেন ডেসটিনি।
তবে এসবের সবটাই অস্বীকার করতে চাইছে দেশটির সরকার। কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা প্রতিরোধে নেওয়া বিধিনিষেধ মানাতে চীনা ও বিদেশিদের প্রতি সমান আচরণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র চায়না ডেইলির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, অনেক বিদেশিই সরকারের প্রতিরোধক ব্যবস্থা মানতে চাইছে না’।
সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ
ইভ্যালিতে যমুনা গ্রুপের বিনিয়োগসিদ্ধান্ত নিরীক্ষার পর
আগস্ট ২৭, ২০২১
কাবুলে আইএসের বোমায় নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৯০ জন
আগস্ট ২৭, ২০২১
এই বিভাগের সর্বশেষ
দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
ইভ্যালিতে যমুনা গ্রুপের বিনিয়োগসিদ্ধান্ত নিরীক্ষার পর
আগস্ট ২৭, ২০২১