|| বার্তা সারাবেলা/রয়টার্স ||
এই ভ্যাকসিন তৈরির নেতৃত্বে রয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারা গিলবার্ট। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
কোভিড ১৯ যা কিনা করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে হচ্ছে। রোগটি ইতোমধ্যেই মহামারি থেকে অতিমারির পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। আর এ ভাইরাসটি দ্রুত তার চরিত্র পাল্টে ফেলে বলেই হয়তো এর প্রতিষেধক বা টিকা আবিস্কারে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজ্ঞানিদেরকে।
তবে সবশেষ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানিরা ভ্যাকসিন তৈরির সাফল্যের প্রক্রিয়ায় অনেকটাই কাছাকাছি অবস্থানে এসে পৌঁছেছেন। তারা তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যে বানরের শরীরে প্রয়োগ করেছেন।
তাতে দেখা গেছে, ChAdOx1 nCoV-19
নামের এই ভ্যাকসিন করোনা আক্রান্ত বানরের বিশেষ করে ফুসফুসের ক্ষত সারাতে দারুন কার্যকর।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা ছয়টি বানরের শরীরে কোভিড-১৯ এর কারন হিসেবে প্রমাণিত SARS-CoV-2 ভাইরাসের উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ করেন। এছাড়া গেল ১৩ই মে থেকে এ পর্যন্ত সময়ে হাজারের বেশী স্বেচ্ছাসেবী এই টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

বানরের ক্ষেত্রে এমন সাফল্যের প্রশংসা করে মুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় এটি একটি ভাল খবর। যদিও এখনো পর্যন্ত মানুষের ক্ষেত্রের এটির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেশ ভাল গতিতেই এগুচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ফার্মাকোএপিডেমিয়োলজির অধ্যাপক স্টিফেন ইভানস বলেছেন, ‘ভাইরাল লোড ও সাবসিকোয়েন্ট নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত যে কার্যকারিতা পাওয়া গেছে আমার কাছে সেটাই সবচে গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিড-১৯ এর টিকা তৈরির এই প্র্রক্রিয়ায় যে কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে তার সঙ্গে রেসপিরেটরি সিনিক্যাল ভাইরাস (আরএসভি) ও সার্স ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে বলেও জানান ইভানস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর “পোটেন্সিয়াল ফর অ্যান্টিবডি-ডিপেডেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট অব দ্য ডিজিস”। যেটি কিনা ২০০৩ সালে SARS CoV এর ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রেও ছিল একটি বড় বাধা।
লন্ডনের কিংস কলেজের ফার্মাসিউটিক্যালস মেডিসিনের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. পেনি ওয়ার্ড বলেন, “ বানরগুলোর শরীরে SARS CoV2 ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পর তাদের ফুসফুসের উল্লেখযোগ্য কোন ধরণের প্যাথলজিক্যাল প্রমাণ মেলেনি। এমনকি নিউমোনিয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।”
ইতোমধ্যেই এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা নিতে হাজারের বেশী মানুষ স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছে। তারপরও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা পশুর শরীরে এটির নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা চালাচ্ছেন। কারণ গবেষকরা পশুর শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত করে এটাই দেখতে চাইছেন যে, ভ্যাকসিন কাজ করছে কিনা এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি নেই।”
পশুর শরীরে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রেও একই রকম হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ইভান বলেন, “আমরা এখনো নিশ্চিত নই, যে কারনে আরো মানুষের শরীরে এর আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার রয়েছে এবং তা করা হচ্ছে।তবে এটা বলতে পারি, বানরের শরীরে যে ফল আমরা পেয়েছি তা মানুষের শরীরেও যথেষ্ট কার্যকর হবে বলে আমরা আশা করছি।”
কম পয়সাতেই মিলবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন



দলের অন্যতম সদস্য অ্যাড্রিয়ান হিল
এদিকে অক্সফোর্ডের জেনার ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অ্যাড্রিয়ান হিল জানাচ্ছেন, যদি তাদের এই ভ্যাকসিন কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তারা এটির প্রচুর সংখ্যক উৎপাদনে যাবেন তারা। যাতে করে বিশ্বজুড়ে কম সময়ে এটি সরবরাহ করা যায় এবং এর দামও কম পড়ে।”
উল্লেখ্য, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেসা এই ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়াতে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। আর তাদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগের দায়িত্বটা রয়েছে অ্যাড্রিয়ান হিলের ওপরই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে হিল বলেন, “এই ভ্যাকসিন খুব বেশী দামি হবে না।” এটির একটিমাত্র ডোজ নিলেই হবে জানিয়ে হিল বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে যেন এই ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট অসুখ কোভিড-১৯ রুখতে ChAdOx1 nCoV-19 নামের পরীক্ষাপর্যায়ের এই ভ্যাকসিনটি এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে যেসব গবেষণা চলছে তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে।