করোনা ঝুঁকিতে সংঘাত দুর্যোগে নিজদেশে ঘরহারা ৫ কোটি মানুষ

|| অন্যদেশ ডেস্ক ||

বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আর এদের বেশীর ভাগই বিশ্বের একভাগ সম্পদ দখলে রাখা ধনীদের চাতুরি আর তাদের রক্ষক পূঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূগের দাম্ভিক অন্তদ্র্বন্দ্বে সৃষ্ট সংঘাত যুদ্ধের শিকার। সম্প্রতি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি পর্যবেক্ষণে জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের (আইডিএমসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি আট লাখ। যারা কিনা আবার নতুন করে হুমকিতে পড়েছে করোনাভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি আইডিএমসি’র প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, কোভিড-১৯ বাস্তুচ্যুত খোলা আকাশের নীচে থাকা অরক্ষিত এসব লাখ লাখ মানুষকে নতুন আরেকত ঝুঁকিতে ফেলেছে। এসব মানুষের মধ্যে সাড়ে চার কোটি মানুষই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ-সহিংসতার কারণে নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আর ভূমিকম্প বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘরবাড়ি হারিয়েছে আরও ৫০ লাখের মতো মানুষ।

যারা যুদ্ধ-সংঘাত বা দুর্যোগের কারণে বাড়ি ছাড়লেও দেশের মধ্যেই রয়েছেন এদেরকে অভ্যন্তরীর বাস্তুচ্যুত অভিহিত করে আইডিএমসি বলছে, এমন মানুষের সংখ্যা এখন মানব ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এর আগে গেল বছর ২০১৯ সালে এমন অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ জানিয়েছিল আইডিএমসি। যা ২০১২ সালের পর এক বছরে বাস্তুচ্যূত হওয়া মানুষের সংখ্যা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব মানুষের বেশীর ভাগকেই থাকতে হচ্ছে শহুরে বস্তির ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর অস্থায়ী আবাসে। কিছু মানুষের হয়তো আশ্রয় মিলেছে রাষ্ট্রের করে দেওয়া জরুরি আশ্রয়স্থলে। যেখানে তাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না প্রয়োজনীয় জনদূরত্ব রক্ষা এবং পরিচ্ছনন্নতামূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। ফলে করোনার এই মহামারি পরিস্থিতিতে নতুন আরেক ঝুঁকিতে ফেলেছে এসব মানুষকে।

আইডিএমসির পরিচালক আলেকজান্দ্রা বিলাক বলেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা ও খাবারের মত মানবিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তেমন নেই বলেই করোনার অপ্রতিরোধ্য সংক্রমণ তাদের অনিশ্চিত জীবনকে পরিস্থিতিকে আরও অরক্ষিত করে তুলবে।

নতুন এই প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কথা বাদ দিলেও বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এমনিতেই বিদ্যমান ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সমষ্টিক ব্যর্থতার একটি নিদর্শন।

সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, ও আফগানিস্তানসহ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশে দীর্ঘ বছর ধরে চলমান যুদ্ধ-সংঘাতে জেরবার মানুষগুলোর কথা ভেবেই এসব সংঘাত সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইডিএমসি। এইদেশগুলোর মধ্য শুধু সিরিয়াতেই গেল নয় বছর ধরে চলছে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নিয়ে চলা গৃহযুদ্ধ। আর এতে গেল ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত শুধু সরকারি হামলা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষ।

গত বছর ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সব রকম পদক্ষেপ নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। স্তুচ্যুতদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণ দূর করতে সরকারগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আইএমডিসি বলছে, তারা ইরাকের পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেখানে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে প্রথম করোনভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সিরিয়া, বুর্কিনা ফাসো ও কলম্বিয়াসহ যেসব দেশগুলিতে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুতির সঙ্কট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে সংক্রমণের হার বাড়ছে।

ভাইরাসটির কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচুতির ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে আইডিএমসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ভারতে দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যে ৬ লাখ অভিবাসী শ্রমিককে ‘নিজগ্রামে ফিরতে কয়েকশ মাইল পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হয়’।

অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষরা সাধারণত খুব বেশি দূরে যেতে চান না। এর কারণ হচ্ছে- হয় তারা নিজের বাড়ি ও পরিবারের কাছাকাছি থাকতে চান অথবা সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য পর্যাপ্ত জন্য অর্থ তাদের থাকে না।

অনেকেই সংঘাতমুখর এলাকাসহ এমন অঞ্চলগুলিতে আটকে আছেন যেখানে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলি পৌঁছাতে পারে না। ফলে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সরকারের উপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের আর কোনো গতি থাকে না।

যুদ্ধের কারণে বা অনেক সরকারের কারণেই কখনও কখনও মানুষ পালাতে বাধ্য হয়। এর মধ্য দিয়ে একটি দেশ তার নিজ নাগরিকদের নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে ব্যর্থ হয়।
সংবাদ সূত্র : বিবিসি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন