|| ইশতিয়াক রূপু, আমেরিকা থেকে ||
প্রত্যেক বছরের নভেম্বর মাসের ৪র্থ বৃহস্পতিবারে আমেরিকায় থ্যাংকস গিভিং ডে পালন করা হয়।কেউ আবার দ্য টার্কি ডেও বলে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক এ অনুষ্ঠান।থ্যাংকস গিভিং ডে’র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই এক হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো।
এইদিনে খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং পামকিন পাই।সঙ্গে টার্কির মতো বড় সাইজের বনমোরগ।
১৮৬৩ সালে শুরু সরকার স্বীকৃত থ্যাঙ্কসগিভিং অনুষ্ঠানে প্রতি বছর অংশ নেয় লাখ লাখ আমেরিকান। ছুটির দিন থাকায় দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আমেরিকানরা ছুটে যায় প্রিয়জনের কাছে।ঐদিন পরিবারবের সকল সদস্যরা এক সঙ্গে মিলিত হয় মধ্যাহ্ন ভোজে যা থ্যাঙ্কস গিভিং এর মুল রেওয়াজ। অথচ করোনাভাইরাস সংক্রমনের তান্ডবে সারা পৃথিবীর ন্যায় দুনিয়ার পরাক্রমশালী দেশ আমেরিকা আজ পর্যুদস্ত। ২৫শে নভেম্বর বুধবার থ্যাঙ্কস গিভিং এর আগের দিন ছিলো পুরো আমেরিকা জুড়ে হাহাকার।
করোনার ছোবলে মৃত্যু সংখ্যা ক্রমে বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছে ১ লাখ ষাট হাজারের মতো। দেশ জুড়ে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখের কাছাকাছি। যা থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের আনন্দকে সীমিত করে দিয়েছে।
সদ্য শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্বে দেশের প্রধান দু্ই দলে আমেরিকার নাগরিকদের প্রনোদনা দিতে সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয়। যা এবার ২০২০ সালের থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের দিনে পারিবারিক আনন্দকে জৌলুসহীন করে দেয়।
এ দিনে সারা দেশের বিমান বন্দর রেল স্টেশন সহ দেশের হাজার মাইল সড়ক মহাসড়কে সৃষ্ট হয় নজীরবিহীন ট্রাফিক জ্যাম। অথচ এ বছর বিভিন্ন গাড়ি ভাড়া খাটানো নামি দামি কোম্পানিরা ব্যবসা না করতে পেরে দেউলিয়া হওয়ার পথে।
সারা দেশে অভুক্ত ও প্রধান এই পারিবারিক উৎসব উদযাপনে অসমর্থ আমেরিকানের সংখ্যা কয়েক কোটি হবে বলে বিভিন্ন মিডিয়া হাউস জানায়।বড় বড় শহরে গৃহহীন ও অভুক্তদের খাদ্য বিতরনকারী বৃহৎ আকারের সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ফুড ড্রাইভ প্রোগ্রামে শত শত আমেরিকান এমনকি বিপুল সংখ্যার অবৈধ অভিবাসীরা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছে। এ ছাড়া নিউইয়র্কের মত বিভিন্ন রাজ্য সরকার বয়স্ক নারী ও পুরুষ এবং কর্মহীন লোকদের পরিবারে ফুড স্টাম্প নামে খাদ্য সহায়তা কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে মরিয়া।
নিউইয়র্কে করোনা সংক্রমনের হার শতকরা ৩ শতাংশের উপর।যা ৮০ লাখ নিউইয়র্কারদের জন্য আশংকাজনক অবস্থার সুস্পস্ট পূর্বাভাস। আট মাস আগে নগরে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে অজানা আরো একটি ভীতি আর আশংকা ছড়াতে শুরু করতো। সবাই ভাবতেন আজ না জানি কোন প্রিয়জন হারানোর সংবাদ আসে। পুরো নগর জুড়ে কষ্ট আর শুধু কান্নার গল্প। প্রিয়জন একেবারে চলে যাবার না চাওয়ার সংবাদ। সকল মিডিয়া আর সংবাদপত্রে প্রিয়জনের সংখ্যায় রুপান্তরের সংবাদ।
অবিশ্বাস্য চরম দুঃসময় কেটে দ্রুত সুসময়ের জন্য নিরবধি চলেছিলো ঘরে ঘরে আর উপসানালয়ে আবেদন আর প্রার্থনা। নগর ও রাজ্য কর্তৃপক্ষের বিরামহীন প্রচেষ্টার ফল দেখা গেলো ধীর গতিতে। নগরবাসী সময় নিয়ে হলেও সামান্যতম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করলো।জনগনের মধ্যে গনসচেতনতা ফিরে এলো। সংক্রমন রোধে আইন মেনে চলাকে অগ্রাধিকার দেবার পাশাপাশি গন পরিবহনে নেয়া হলো নানা ধরনের সংক্রমন রোধ আইনের প্রয়োগ। যার সম্মিলিত ফল পেতে লাগলেন নগরবাসী আগষ্ট-২০ এর মাঝামাঝি।
প্রথমে করোনা সংক্রমনের হার কমার পাশাপাশি মৃত্যুর হার কমতে লাগলো নাটকীয় ভাবে। নগর বাসী আইন মেনে বাইরে সীমিত চলাচল শুরু করলেন।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাতি গাধা দুপক্ষই নড়াচড়া শুরু করলেন। এক পক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেতে শুরু করলেন জনগন তথা ভোটারদের কাছে। ভোটের সফল সমাপ্তির পর যদিও বর্তমানে আরেকটি অবাক হওয়ার মতো শিষ্টাচারবর্জিত আচার চলছে। এতোসবের পরও নিউইয়র্কারদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রবাসী আগামি জানুয়ারীতে আমেরিকার গনতন্ত্রের জয় দেখতে চায়। এতোসবের পরেও বৃহস্পতিবার ২৬শে নভেম্বর সারাদিন কোটি কোটি আমেরিকান শত বছরের বেশি সময় ধরে চলা ঐতিহ্যবাহী থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ শুরুর আগে প্রার্থনা করবে ‘আগামির আমেরিকা তথা বিশ্ব হউক করোনা মুক্ত এবং সম্মৃদ্ধশালী’।