|| বার্তা সারাবেলা ||
জনগণের দেয়া করের টাকায় এক ফেস মাস্ক ২৮ মার্কিন ডলারে(!) কিনে এখন কারাগারে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওবাদিয়া মোয়ো। শুধু মাস্কই নয়, এমন অস্বাভাবিক দামে ৬ কোটি ডলারের ওষুধ ও সুরক্ষা উপকরণ কিনেছেন তিনি। যে কোম্পানির কাছ থেকে এগুলো কেনা হয়েছে সেটিরও বয়স মাত্র দুইমাস। সরকারবিরোধীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রের টাকা পাইয়ে দিতেই মন্ত্রী এই কোম্পানিকে বেছে নেন এবং বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।
দুর্নীতির এমন খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে চাউড় হওয়ার পর তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমালোচনা আর সংক্ষোভের ঝড় ওঠে দেশটিতে। নড়ে চড়ে বসে দেশটির দুর্ণীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় ওবাদিয়া মোয়োকে।
শুক্রবার গ্রেফতারের পরপরই মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। সেখান থেকে শনিবার আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে দুই মাস বয়সী ওষুধ কোম্পানি ড্র্যাক্স ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় ওই প্রতিনিধির নাম ডেলিস এনগুওয়ায়া। তার কোম্পানিই ওষুধ, ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণসহ (পিপিই) বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ পেয়েছিল। বিরোধী দলের অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ডেলিসের কোম্পানিকে কাজ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, উল্লেখিত কোম্পানি সুইজারল্যান্ডের। এবং প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ বছর ধরে ওষুধ তৈরি করে আসছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এনগুয়ায়া। আসলে ড্র্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল নামের কোম্পানিটি একটি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান। তাদের কোন ধরণের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির অভিজ্ঞতা ও স্থাপনা নেই।
শুধু ড্র্যাক্স ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় প্রতিনিধি ডেলিস এনগুওয়ায়াই নন, এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে রাষ্ট্রীয় ওষুধ ক্রয় সংস্থার বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার শাস্তি ও বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। দেশজুড়ে সমালোচনা আর সংক্ষোভের প্রেক্ষিতে মেডিকেল সরঞ্জাম ক্রয়ের ওই চুক্তি বাতিল করেছেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনানগাগওয়া।
এদিকে সংবাদপত্রগুলোতে প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনানগাগওয়া, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেদের সঙ্গে অভিযুক্ত ওষুধ কোম্পানি ড্র্যাক্স ইন্টারন্যাশনালের স্থাণীয় প্রতিনিধি ডেলিস এনগুওয়ায় ‘র ছবি ছাপা হওয়া তোপের মুখে পড়েছে সরকার। তবে বিবৃতি দিয়ে ডেলিসের সঙ্গে কোন ধরণের ব্যবসায়িক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট এমনানগাগওয়ার এক ছেলে।
স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের মধ্যেই মার্কিন ডলারে বেতন দাবিতে আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু করেছেন দেশটির নার্স-চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের যুক্তি, দেশটিতের নিত্যপণ্যের দাম তথা মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৭৫০ শতাংশ। স্থানীয় মূদ্রার এতোটাই অবমূল্যায়ন হয়েছে যে ঝুড়ি ঝুড়ি টাকা দিয়েও কোন পণ্য কেনা যায় না। দীর্ঘ বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান এই দেশটিতে অনেকদিন ধরেই ব্যবসায়ীরা আর স্থানীয় মূদ্রায় পণ্য বেচাকেনা করতে অনীহা জানিয়ে আসছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীরা এও অভিযোগ যে, রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জামের যোগান না থাকায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আফ্রিকার এ দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের দেহে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে; মারা গেছে ৪ জন।
সংবাদ সূত্র : এপি ও রয়টার্স