অনলাইন ডেস্ক
করোনা সংক্রমণের মাতা কমতে পারে চলতি মাসের শেষনাগাদ। আবার বাড়তে পারে আগামী বসন্তের শুরুতে। এমনটাই জানালেন চীনের শ্বাসতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ জং ন্যানশন। জং তার এই অবস্থান জানিয়েছেন গেল বুধবার রাতে দেশটির এক টেলিভিশনকে।
চীনা খবরের কাগজ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার রাতে চীনের একটি টেলিভিশনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার নিয়ে কথা বলেন জং ন্যানশন। তিনি বলেন, গরম আর বিভিন্ন দেশের কঠোর পদক্ষেপের কারণে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
জং বলেন, ‘করোনার প্রকোপ ঠেকাতে বিশ্বের সব দেশই প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আমার ধারণা এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এর সংক্রমণ বিস্তার কমতে শুরু করবে।’
তবে, বসন্তের শুরুতে সংক্রমণের মাত্রা আবার বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। চীনা এই বিশেষজ্ঞের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞও একইরকম সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভল্যুশন জানিয়েছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে হাসপাতালগুলোকে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী সামলাতে হতে পারে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ লাখ আক্রান্তের মধ্যে ২ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি রোগী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
ইউরোপের সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২১ হাজার, যার অর্ধেক আক্রান্ত ইতালি ও স্পেনে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক মাইক রায়ান এ সপ্তাহে জানান, গত মাসে ইউরোপের দেশগুলো কঠোরভাবে লকডাউন ব্যবস্থা নেওয়ায় করোনার বিস্তার যে হারে বাড়ার কথা তেমনটা হয়নি। স্থিতিশীল অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
এদিকে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক সমীক্ষা বলছে, ইউরোপের যে ১১টি দেশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেসব দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার কমেছে, তারা প্রায় ৬০ হাজার মৃত্যু এড়াতে পেরেছে।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বিশ্বের সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানিয়ে চীনা বিশেষজ্ঞ জং বলেন, ‘দেশগুলো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই তারা মানুষকে ঘরে রাখতে পেরেছে।’
তবে চীনসহ অন্যান্য দেশে উপসর্গ প্রকাশ ছাড়াই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জং। তিনি বলেন, ‘এখন যে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু আছে সেটি ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকলে সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপও প্রতিরোধ করা যাবে।’
গত বুধবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস বহন করছেন এমন ১ হাজার ৭৫ জন বর্তমানে চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে আছেন। নতুন শনাক্ত হওয়া ১ হাজার ৮৬৩ জন হাসপাতালে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০১ জন অন্যান্য দেশ থেকে আক্রান্ত হয়েই চীনে প্রবেশ করেছেন।
জং বলেন, ‘যারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন তাদের সোয়াব টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হলে স্বাস্থ্যকর্মীরা সহজেই ভাইরাসের বাহকদের শনাক্ত করতে পারবেন।’
গত মাসে হংকং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে গেছে। দ্রুত হাঁটার সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। তারা দ্রুত হাঁপিয়ে উঠছেন।
এ প্রসঙ্গে জং বলেন, ‘সার্সের মত কোভিড-১৯ রোগীদেরও সুস্থ হয়ে ওঠার পর ফুসফুসে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকতে পারে। ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে তারা স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’#
