|| বার্তা সারাবেলা ||
উত্তর কোরিয়ায় নারীদের অবস্থা খুবই খারাপ। এ তথ্য জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদন বলছে, দেশটিতে নারীদের আটকে রেখে শুধু নির্যাতনই নয়, করা হচ্ছে ধর্ষন, এবং অকথ্য ধরণের শারীরিক, মানসিক নিপীড়ণ চালানো হচ্ছে তাদের ওপর। আর কাজগুলো করছে বন্দিশিবিরের পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। যা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসঙ্গের মানবাধিকার প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, গেল ২০০৯ থেকে ১৯ সাল অবধি দেশটির যেসব নারী দেশ ছাড়তে গিয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ধরা পড়েছে তাদেরকেই বন্দিশিবিরে নিয়ে এমনতর অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার বন্দিশিবির থেকে সাজাশেষে মুক্তি পাওয়া এমনি একশ’ নারী দক্ষিণ কোরিয়াতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর রাজধানী সিউলে তাদের সঙ্গেই কথা বলেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তা ড্যানিয়েল কলিঞ্জ।
এসব নারী জানিয়েছেন, বন্দিশিবিরে তাদেরকে ঘুমোতে দেওয়া হতো না, খাবার দেওয়া হতো না, শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি না হলে দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হতো। চলতো শারীরিক নিপীড়ন। মাসের পর মাস দিনের আলো আর মুক্ত বাতাস তাদের কাছে থাকতো অধরা।
“আই স্টিল ফিল দ্য পেইন” আমি এখনো সেই অকথ্য ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি-শিরোনামের প্রতিবেদনে অনেক নারীই বলেছেন, তাদের অনেকেরই গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে, আর এমনতর শারীরিক বাধ্যতা ঘটাতে গিয়ে মারাও গেছেন অনেকে।
ড্যানিয়েল কলিঞ্জকে এক নারী জানিয়েছেন, তিনি ঘুমোতেন না, রাতদিন শুধুই কাজ করতেন, কারন তিনি মার খেতে চাননি। শেষতক অবস্থা এমন দাঁড়ায় তিনি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে এরআগে যখনই এধরণের কোন তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তখনই দেশটির সরকার অভিযোগ করেছে এই বলে যে, এগুলো উত্তর কোরিয়া সরকারকে উৎখাতের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশমাত্র।
আরেক নারী জানিয়েছেন, বন্দিশিবিরে তার প্রথম রাতের কথা, সেদিনই তাকে ধর্ষন করে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা।ঐ কর্মকর্তা তাকে হুমকি দিয়েছিল…তাকে প্রত্যাখ্যান করলে জোর করেই…। এমনকি যদি তার সঙ্গে সম্পর্ক করতে রাজি হয়, তাহলে তাকে মুক্তি পেতে সহায়তাও করবেন ঐ কর্মকর্তা।
তবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মকর্তা ড্যানিয়েলে কলিঞ্জ জানান, দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে আসা নারীরা যেসব কথা তাকে জানিয়েছেন, সেগুলো যাচাই করা বেশ কঠিণ। কেননা উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রিয়ভাবেই গোটা বিশ্ব থেকে এতো বেশী বিচ্ছিন্ন যে, সেখানকার তথ্য-উপাত্ত পাওয়াও যেমন প্রায় দু:সাধ্য, তেমনি দেশত্যাগি যারা বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়াতে আশ্রয় নেন তাদের দেওয়া তথ্যও যাচাই করা অনেক সময়েই সহজ হয়ে ওঠে না।
ড্যানিয়েল কলিঞ্জ বলেন, মূলত দুটো উদ্দেশ্য হাসিল করতেই তাদের এই কার্যক্রম চলছে, একটি হচ্ছে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পিয়ংইয়ং সরকারকে চাপে রাখা। পাশাপাশি যারা দেশটি ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন সেইসব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো যে, তারা যেন নিপীড়িত-অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দেন।
সংবাদ সূত্র : রয়টার্স।