ইউরোপে বাড়তে যাচ্ছে করোনা সংক্রমণমাত্রা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন শিথিল করে অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টা করছে ইউরোপের এমন বেশ কয়েকটি দেশে আবারও বাড়ছে সংক্রমণমাত্রা।

|| বার্তা সারাবেলা ||

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন শিথিল করে অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টা করছে ইউরোপের এমন বেশ কয়েকটি দেশে আবারও বাড়ছে সংক্রমণমাত্রা। বাড়ছে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যাও। সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এখন মাস্ক বাধ্যতামূলক করাসহ নতুন অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, জার্মানিতে গেল ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ২ শ’র বেশি মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বুধবার দেশটির রাষ্ট্রিয় কর্মকর্তারা এই তথ্য দিয়ে বলেছেন, গেল তিন মাসের মধ্যে এদিনই সবচেয়ে বেশি রোগীর খোঁজ মিলেছে জার্মানিতে। কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের যে মানুষ মূলত ছুটি কাটিয়ে এলাকায় ফিরছেন তাদের মধ্যেই নতুন করে এই সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। যা অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল।

জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার দেশটির নাগরিকদের মাদ্রিদ এবং বাস্ক অঞ্চলসহ স্পেনের কিছু অংশে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের ব্যাপারেও সতর্ক করেছে। মহামারী শুরুর পর থেকে করোনাভাইরাস এ পর্যন্ত জার্মানির ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

ফ্রান্সেও গেল ২৪ ঘণ্টায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দেশটিতে মে মাসে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর একদিনে আর কখনও এত রোগীর খোঁজ মেলেনি।

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত স্পেনে মঙ্গলবার নতুন করে এক হাজার ৪১৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটির কাতালুনিয়া ওপেন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সালভাদর মাসিপ বলেছেন, ““আমরা এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখান থেকে পরিস্থিতি ভালোর দিকেও যেতে পারে আবার খারাপের দিকেও যেতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই সংক্রমণ কমাতে আমাদের এখন বিধিনিষেথ শিথিলের পথে হাঁটা থামাতে হবে।”

স্পেনে এরই মধ্যে শনাক্ত রোগী ৩ লাখ ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; এ সংখ্যা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

বেলজিয়াম সরকারও বুধবার থেকে রাজধানী ব্রাসেলসের সব এলাকায় সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে ১২ বছরের নিচের কাউকে এ নির্দেশনা মানতে হবে না। ব্রাসেলসে এরআগে কেবল জনসমাগম হয় এমন জায়গা ও শপিং সেন্টারের মতো স্থানগুলোতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের প্রতিদিন প্রতি ১০ লাখ বাসিন্দা অনুপাতে ৫০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর রাজধানীর সব উন্মুক্ত স্থানে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাসিন্দারা এ নির্দেশনা মানছে কিনা, তা দেখতে পুলিশের টহলও বাড়ানো হয়েছে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী, বেলজিয়ামে এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে; প্রাণঘাতী ভাইরাসে দেশটিতে মৃত্যুও ৯ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে হিমশিম খাওয়া ফ্রান্স চলতি বছরের প্যারিস ম্যারাথন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ম্যারাথনটি ৫ এপ্রিল হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে নভেম্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এখনকার পরিস্থিতিতে নভেম্বরেও ম্যারাথন আয়োজনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, বলছেন আয়োজকরা।

ফ্রান্সে সরকারি হিসাবেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

বুধবার গ্রিসও একদিনে ২৬২ নতুন রোগী শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে। মহামারী শুরুর পর দেশটিতে এর আগে একদিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি।

গ্রিসে এখন পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ১৭৭, মৃত্যু হয়েছে ২১৬ জনের।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পর্যটনের ভরা মৌসুমেও দেশটির কর্তৃপক্ষ রেস্তোরাঁ, বারের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ এবং কিছু বলকান দেশের নাগরিকদের গ্রিসে প্রবেশও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন