|| অনলাইন ডেস্ক ||
ঘরে থাকাই যখন করোনা ঠেকানোর অন্যতম কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা, তখন বিশ্বজুড়ে খাবার সংগ্রহ আর অসুস্থতা মানছে না এই নির্দেশনা। এই দুটি অতিপ্রয়োজন মেটাতে মানুষকে বের হতে হচ্ছে ঘরের বাইরে। বিশেষ করে যারা দিনমজুর আর নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদেরকে তো ঘরের বের না হলে চলছেই না। ৬৫ বছর বয়সী এমনি একজন দিনমজুর অরিভজন। তার বাড়ি ভারতের তামিলনাড়ুর কুমবাকোনা জেলায়। ঘরে খাবার নেই বললেই চলে। তারওপর স্ত্রী মনজুলা ক্যান্সারে ভুগছেন বেশ অনেক বছর ধরে।
করোনা অভিঘাতে দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যেই বেড়ে যায় স্ত্রীর অসুস্থতা। অন্য কোন উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে নিজের সাইকেলে নিয়ে রওনা দেন পন্ডিচেরির হাসাপাতালের দিকে। ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেও যান তিনি।
দিনটা ছিল গেল মার্চ মাসের ৩০ তারিখ। লকডাউনে অবরুদ্ধ সারা ভারত। ৬০ বছর বয়সী স্ত্রী মনজুলাকে সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে বসিয়ে রওনা হন পন্ডিচেরির জওহারলাল নেহরু ইন্সটিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ- জেআইপিএমইআর এর দিকে। স্ত্রী যাতে সাইকেল থেকে পড়ে না যান, সেজন্য তাকে রশি দিয়ে শক্ত করে নিজের সঙ্গে বেঁধে নেন অরিভজন। বাড়ি থেকে হাসপাতালের দিকে রওনা হন ৩১শে মার্চ সকাল পৌণে পাঁচটায়। আর দু’ঘন্টার দীর্ঘ ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাত সোয়া দশটার দিকে পৌঁছে যান হাসপাতালে।
কিন্তু এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যারপর নাই হতাশ হতে হয় তাদেরকে। কেননা লকডাউনের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আঞ্চলিক ক্যান্সার সেন্টার ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বৃদ্ধ এই দম্পতির এমনিভাবে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে আসার কথা শুনে মনজুলার কেমোথেরাপির ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল কর্মকর্তারা।
অরিভজন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দিনটি ছিল গেল মাসের ৩০ তারিখ। আমরা হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই ওর চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরাই আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন। তারাই টাকা তুলে ব্যবস্থা করে দেন অ্যাম্বুলেন্সের। এমনকি আগামী এক মাসের প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাও করে দেন তারা।’
অরিভজন এও জানান, চিকিৎসকরা তাদেরকে আবারো যেতে বলেছেন হাসপাতালে। তবে রোগির অবস্থার অবনতি হলে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথাও দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্ত্রীর জন্য সেরা চিকিৎসা যোগাতে প্রত্যয়ি অরিভজন এখনো বিশ্বাস করতে পারেন না কীভাবে সেদিন তিনি তার প্রিয়তমাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন।#
