সংগ্রামে জীবন টেনে নেয়া এক মোনছেপ আলী

শতবছর বয়সী মোনছোপ আলী পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঝালমুড়ি, দুধ, ডিমের মতো খাদ্যপণ্য বিক্রি করেন। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন মাইলের পর মাইল ছুটে চলেন পায়ে হেঁটে। জীবনের শেষ সময়েও সংগ্রামী জীবনে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। শত বছর পার করলেও জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।

|| রাসেল ইসলাম, যশোর থেকে||

শতবছর বয়সী মোনছোপ আলী পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঝালমুড়ি, দুধ, ডিমের মতো খাদ্যপণ্য বিক্রি করেন। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন মাইলের পর মাইল ছুটে চলেন পায়ে হেঁটে। জীবনের শেষ সময়েও সংগ্রামী জীবনে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। শত বছর পার করলেও জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। 

বলছিলাম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বকুলিয়া গ্রামের ১০২ বছর বয়সের মোনছোপ আলীর কথা। ১৯১৯ সালে বকুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সে অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ১০২ বছর। বাবার নাম মৃত আব্দুল হামিদ, মা মৃত বেশো বেগম। 

স্ত্রী মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। নিঃসঙ্গ মোনছোপ আলীর চার সন্তানের মধ্যে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। তারা সবাই বিয়ে করেছেন। এখন এক ছেলের সংসারেই ঠাঁই মিলেছে মোনছেপ আলীর। সংসার আর ছেলে মেয়ে বড় করতে জীবনের বেশীটা সময় পার করেছেন  গ্রামে গ্রামে পায়ে হেঁটে ডিম ফেরি করে। এখনো করছেন। দিন শেষে আয় এক থেকে দেড়শ টাকা। এতেই তিনি খুশি। কারো কাছেতো হাত পাততে হয় না।

শতবর্ষী এই বৃদ্ধ রাষ্ট্রিয় সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হলেও এখনো মেলেনি কোন সহায়তা। শুনেছেন ৬৫ বছর বয়স হলেই নাকি দেয়া হয় বয়স্কভাতা। মোনছোপ আলী বলেন, এখন অনেক বয়স হয়েছে। চোখে ঠিকঠাক দেখতে পাই না। ভালভাবে চলতে কষ্ট হয়। গত ৩ বছর ধরে বয়স্ক ভাতার কার্ড করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। 

গেলেই বলে এবারও তোমার কার্ড হবেনা। আজ শুধু একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে আর কত বয়স হলে কার্ড পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, আমার বড় বোনের বয়স ১শত ৫ বছর দুঃখের বিষয় সেও এখনো বয়স্ক ভাতার আওতাই পড়েনি।

ছোট ছোট কন্ঠে মোনছেপ আলী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনিত অনুরোধ যতদিন বেঁচে থাকি তিনি যেন আমাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।

এরইমধ্যে শার্শা উপজেলার এক সাংবাদিকের মাধ্যমে ফেইসবুকের পাতায় প্রকাশ পায় মোনছোপ আলীকে নিয়ে ছোট্ট একটি প্রতিবেদন। পরে শার্শার কৃতি সন্তান দেশসেরা উদ্ভাবক খ্যাত সমাজ সেবক মিজানের নজরে আসলে বিষয়টিকে সামনে আনেন তিনি। শনিবার দুপুরে চাল, ডাল, তেল সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে মোনছোপ আলীর বাড়িতে হাজির হন তিনি। 

মোনছেপ আলীর বাড়িতে কেন এলেন তিনি জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার ফেইসবুক পেজে আপলোড করার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ ফারুক মহোদয় লিংকে কমেন্ট করে মোনছেপ আলীর বাড়িতে আসতে বলেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে মনস্থির করেন। 

সে কারনেই আজ আমার এখানে আসা। আশা করছি খুব দ্রুতই মোনছোপ আলীর জন্য তার বাড়ির পাশেই একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। গ্রামে গ্রামে আর ঘুরতে হবেনা তাকে। পাশাপাশি মোনছোপ আলীর বয়স্ক ভাতার জন্য শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেছার আলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড দ্রুত করে দেবেন বলে কথা দিয়েছেন।

উদ্ভাবক মিজান এসময় আরো বলেন, শতবর্ষী এক বাবাকে দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে আরও এক শতবর্ষী মাকে পেলাম। এই মায়ের জন্যও একটি হুইলচেয়ারের পাশাপাশি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করতে চাই।

সমাজের বিত্তবান ও দরদী মানুষরা যদি এমন একজন করে শতবর্ষী বৃদ্ধ বাবা মাকে খুঁজে বের করে পাশে দাঁড়ান তাহলে শতবর্ষী বাবার কাঁধে থাকবে না ডিমের ঝুঁলি, থাকবে না শতবর্ষী মায়ের কষ্ট। 

শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেছার উদ্দিন বলেন,  মনছেপ আলীর বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। এই মুহুর্তে বয়স্ক ভাতার কার্ড নেই তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে  তার জন্য একটি বয়স্ক ভাতার  কার্ডের ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করবো।

সংবাদ সারাদিন