|| আবুল হোসেন সবুজ, গাজীপুর ||
সুলতানপুর দরগা পাড়া শাহী মসজিদ। নির্মিত হয় আজ থেকে ছয়শ’ বছর আগে সেই মোঘল আমলে। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের এই মসজিদটি আজো পুরাকীর্তির নিদর্শন হয়ে আছে। মসজিদটির আরেকটি বৈশিষ্ট হচ্ছে, ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি কেউ তৈরি করেনি। আল্লাহ’র কুদরতে এটি মাটি ফুরে উঠেছিল। তাই অনেকে বলেন, এটি গায়েবি মসজিদ।
প্রতি শুক্রবার মুসলিম ধর্মের লোকজন ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষেরাও আসেন এই মসজিদ দেখতে।
গাজীপুর ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার লোকজন আসেন এই মসজিদ দেখতে। শুধু দেখতেই নয়, মনের বাসনা পূরণ করার জন্য মানতও করতে আসেন অনেকে। সঙ্গে নিয়ে আসেন হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া, গরু ও নগদ টাকা এমনকি স্বর্ণের গহনাও। দেখা এবং মানত পূরণের জন্য শাহী মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্যও আসেন অনেকে।
মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী ৬শত বছরের পুরনো শাহী মসজিদটি জেলার কাপাসিয়া উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে টোকা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে। এটি টোক সুলতানপুর দরগাপাড়া শাহী মসজিদ নামে সমধিক পরিচিত।
এদিকে সপ্তাহে একদিন প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন নামাজ আদায় করতে আসেন। প্রতি শুক্রবারে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার লোক আসেন এই মসজিদে। তবে এই মসজিদটি কবে নির্মাণ করা হয়েছিল তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কারও কাছে।
ধারণা করা হয়, মুঘল আমলে এটি নির্মিত হয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্যমতে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩৬০ জন আউলিয়া এসেছিলেন। তার মধ্যে ১৩১তম আউলিয়া ছিলেন শাহ সুলতান। যার নাম অনুসারে এই স্থানটির নাম করণ করা হয় সুলতানপুর।
অন্যদিকে সুলতান আকবরের শাসনামলে ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধসময়ে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। মসজিদের মূল কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল সুরকি ও ইটের মিশ্রণে। যেখানে গম্বুজের মধ্যে খোদাই করে অস্পষ্ট ভাবে লেখা আছে ১৩৪৬। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে মসজিদটির পরিসর বাড়ানো হয়।
গত শুক্রবার ১২ই ফেব্রুয়ারি নামাজ পড়তে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন আর মসজিদটির পুরনো সেই সৌন্দর্য নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে নির্মাণকালের মূল গম্বুজটি।
মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে গণকবর। যেখানে অসহায় মৃত মানুষদের কবর দেওয়া হয়। এছাড়াও সেখানে রয়েছে সুলতানিয়া হাফিজিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসা। যেখানে বর্তমানে প্রায় তিনশ’র বেশী শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।
মসজিদের মূল কাঠামোর ভেতর শতাধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারলেও সম্পূর্ণ মসজিদটিতে একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।
গত শুক্রবার কামারগাঁও গ্রাম থেকে নামাজ পড়তে আসা কয়েকজনের মধ্যে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম নাঈমের। তিনি বলেন, প্রায় প্রতি শুক্রবারেই আমি এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসি। এই মসজিদে নামাজ পড়লে অন্যরকম একটা অনুভুতি হয়।
মসজিদের মোতাওয়াল্লী মো. নুরুল ইসলামের কাছে মসজিদটির বিভিন্ন অজানা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই মসজিদটি ৬শ বছরের পুরনো। প্রতি সপ্তাহে মসজিদে দান হওয়া লক্ষাধিক টাকা থেকে মসজিদের উন্নয়ন, এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণ, মিনার নির্মাণ, পাঁচতলায় নির্মিত কিতাব ভবনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসাথে প্রতিবছর তিন দিনের ইসলামী মহা-সম্মেলনও আয়োজন করা হয় এই মসজিদ চত্তরে।