হুইলচেয়ারে বিশ্বভ্রমণ করা অসাধারন একজন

অন্যরকম ডেস্ক :


১৫ বছর বয়স পর্যন্ত আর ১০টা সাধারণ শিশুর মতোই ছিল রিক হানসেনের জীবন। কিন্তু তার পরেই ওলোট-পালোট হয়ে গেল সবকিছু। একদিন বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। পেছন থেকে ট্রাক এসে কেড়ে নেয় হানসেনের হাঁটার সব ক্ষমতা। এক পলকে বদলে যায় গোটা জীবন। এ দিনের পর থেকে হুইলচেয়ার ছাড়া আর এক কদম পথ অতিক্রম করতে পারেননি হানসেন, অথচ সভ্যতা আর মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন অজস্র মাইল।


১৯৫৭ সালের ২৬ আগস্ট ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় জন্ম নেন রিক হানসেন। কিশোর হানসেনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল তার দেশ কানাডার হয়ে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করা। ছেলেবেলা থেকেই অ্যাথলেট হিসেবে দারুণ ছিলেন হানসেন। কিন্তু হঠাৎই যে হুইলচেয়ার! আচমকা ঝড়ের মতো এ আঘাত সবকিছু যেন পালটে দেয় ওর। কিন্তু স্বপ্ন থাকলে কে থামায় মানুষকে! প্রতিবন্ধিতা নিয়েই ¯œাতক পাস করেন হিক। আর অ্যাথলেট হওয়ার স্বপ্ন! শুনলে অবাক হবেন, এত সীমাবদ্ধতা সত্যেও ১৯তম আন্তর্জাতিক হুইলচেয়ার ম্যারাথনসহ ছয়বার গলায় ঝোলান প্যারা-অলিম্পিকের মেডেল। আর এর পরের গল্প তো রূপকথার মতো!

হানসেনের বন্ধু টেরি ফক্স। হাড়ের ক্যান্সারে পা কেটে ফেলতে হয় ফক্সের। স্পাইনাল কর্ড ক্যান্সারের গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ফক্স হুইলচেয়ারে বসেই গোটা কানাডা ভ্রমণের জন্য বের হন রাস্তায়। বন্ধুর দেখাদেখি হানসেনও এমন কিছু একটা করার ব্যাপারে মনস্থির করেন। সিদ্ধান্ত নেন, হুইলচেয়ারে বসেই তিনি গোটা দুনিয়া ভ্রমণ করবেন। আর তার এ ভ্রমণ থেকে প্রাপ্ত সব অনুদানের টাকা পৌঁছে দেবেন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য। যেই কথা সেই কাজ! ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ হানসেন ভ্যানকুবারের ওয়াকরিডজ মল থেকে রওনা হন ‘ম্যান ইন মোশন’ শিরোনামের তার এই মহাকাব্যিক ভ্রমণে। চারটি মহাদেশের প্রায় ৩৪টি দেশে ৪০ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হুইলচেয়ারে ভ্রমণ শেষে হানসেন ১৯৮৭ সালের ২২ মে ফেরেন ভ্যানকুবারের বিসি প্লেস স্টেডিয়ামে। সঙ্গে করে আনেন স্পাইনাল কর্ড ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলারের অনুদান। ৭৯২ দিনের এ ভ্রমণে প্রায় ৪৬৭ দিনই ছিলেন তিনি রাস্তায়, ১১৭ বার হুইলচেয়ারর টায়ার আর ১১ বার হাতমোজা বদল করতে হয়েছে তাকে। আর যখন ফিরলেন, গোটা বিসি ফ্লোর স্টেডিয়াম যেন জনারণ্য। মানুষের ভালোবাসা আর মুগ্ধতায় হানসেন হয়ে উঠলেন মানবতার মহানায়ক।


‘ম্যান ইন মোশন’ নামের এ ভ্রমণগাথায় ব্যবহৃত হুইলচেয়ার, হানসেনের হাতমোজাসহ সবকিছু বিসি স্পোর্টস হল অব ফেইম অ্যান্ড মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। অসাধ্য সাধন করার জন্য হানসেনকে নিয়ে চলচ্চিত্র, গান সবই করেছেন তার মুগ্ধ ভক্তরা। হানসেন ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ম্যান ইন মোশন ফাউন্ডেশন, যেটা আজও হাড় ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হুইলচেয়ারের এ জাদুকর ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটার সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন, শারীরিক অক্ষমতা নয়, মানুষিক অক্ষমতাই আমাদের বড় সীমাবদ্ধতা। হানসেন গোটা জীবন ধরে চেষ্টা করেছেন মানুষকে সচেতন করতে। বইও লিখেছেন ‘গোয়িং দ্য ডিসটান্স’ শিরোনামে, যেখানে তিনি মানুষকে আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। ধন্যবাদ, প্রিয় হুইলচেয়ারের জাদুকর।

সংবাদ সারাবেলা/নাআ/সেখা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন