যেভাবে এলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ভ্যালেন্টাইনস ডে

বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এমনি আরেক ভালোবাসার চড়ামূল্য যোজিত হয়েছিল রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জীবনে। সেই থেকেই বিশ্বজুড়ে তারুণ্যে উদযাপন ভালোবাসা দিবস।

|| বার্তা সারাবেলা ||

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ভালোলাগা আর ভালোবাসা। সহজাত এই প্রবৃত্তি প্রকাশ করতে গিয়ে সবথেকে বেশী মুল্যও দিতে হয় মানুষকে। আমাদের দেশে রজোকিনীর ভালোবাসার মূল্য দিতে গিয়ে চন্ডিদাসকে বড়শি বাইতে হয়েছিল বারো বছর। ভালোবাসার অধিকারবোধ থেকে পার্বতীকে কঞ্চির আঘাতের মুল্য কীভাবে দেবদাসকে দিয়ে হয়েছিল তা কমবেশী সবারই জানা। বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এমনি আরেক ভালোবাসার চড়ামূল্য যোজিত হয়েছিল রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জীবনে। সেই থেকেই বিশ্বজুড়ে তারুণ্যে উদযাপন ভালোবাসা দিবস।

ছবি: সংগৃহিত

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন মানবপ্রেমিক ও খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে ভ্যালেন্টাইনকেও দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে তিনি  তা অস্বীকার করেন। শাস্তি হিসেবে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের এমন আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান তথা রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

কারারুদ্ধ হওয়ার পর অনেক রোমের যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে দেখতে আসতো এবং ফুল উপহার দিতো। এমনিসব তরুণ তরুণীদের মধ্যে এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও আসতো ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে। দুজনের কথাও হতো দীর্ঘসময়। কথা বলার সাহচর্যে একসময় অন্ধ মেয়েটির প্রেমে পড়েন ভ্যালেন্টাইন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় চোখও ভালো হয়ে যায় অন্ধ মেয়েটির। কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েটির প্রতি ভ্যালেন্টাইনের এমন ভালোবাসা কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

ছবি: সংগৃহিত

এছাড়া খ্রিস্টীয় ইতিহাস মতে, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি হয়।

সম্রাটের এমন ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনও সম্রাটের এমন নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন।

ছবি: সংগৃহিত

ইতিহাসের আরেক তথ্য বলছে, ইউরোপে যখন খ্রিস্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও রোমীয় রীতি মেনে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের যুবকরা মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। পরে ওই বাক্স থেকে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলতো, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠতো, সে ওই মেয়ের প্রেমে মগ্ন হয়ে যেতো। মেয়েটিকে চিঠি লিখত এই বলে যে, ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বছর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতি পুরোপরি বাতিল করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খ্রিস্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে পাঠাতে হবে। কারণ এটা খ্রিস্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খ্রিস্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

ছবি: সংগৃহিত

অন্য আরেকটি ইতিহাস মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রানী জুনোর সম্মানে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিলো সাধারন ছুটির দিন। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ই ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় লটারির মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাঙ্কিত কাগজের স্লিপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা স্লিপের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হতো এবং ভালোবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে পরিণতি পেত ওই সম্পর্ক। ওই দিনের শোক গাঁথায় আজকের এই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’।

সূত্র: হিস্টরি.কম

 

 

সংবাদ সারাদিন