অন্যরকম ডেস্ক:
স্বপ্ন সময়ের সীমারেখা জানে না। খুব ছোট হয়তো স্বপ্নটা, কিন্তু সেটার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষাও ক্লান্তি আনে না। তেমনি একজন হিরোয়ানা ইমুরা। তার শৈশবে দেখা স্বপ্নটির জন্য বৃদ্ধ বয়সে টানা ১৯ বছর পরিশ্রম করেছেন। গড়েছেন অপূর্ব এক প্রাসাদ।
পাহাড়ের চ‚ড়ায় সাদা পাথরে তৈরি জাপানের সুন্দরতম প্রাসাদের নাম হিমিযি ক্যাসেল। ১৩৩৩ সালে নির্মিত এ প্রাসাদটি দেখতে হাজার হাজার মানুষ ছুটে যায়। এমনই হাজার দর্শনার্থীর একজন হিরোয়াসা ইমুরা। শৈশবে এটা দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয় হিরোয়াসার। আর তখন ছোট্ট শিশুর মনে গেঁথে যায় এক অদ্ভুত স্বপ্ন। নিজেদের বাগানে মনোমুগ্ধকর এ প্রাসাদের ছোট আকৃতির প্রতিরূপ তৈরির স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে হিরোয়াসার মন।
এরপর শৈশব পেরোনো হিরোয়াসার প্রতিদিনকার জীবনের প্রাত্যহিকতা। সকাল-দুপুর অফিস। কাজের ফাঁকে আরও হাজার কাজ। কিন্তু জীবনও তো ছুটি জানে। চাকরি ফুরিয়ে গেলে চোখে ঝলক দিয়ে ওঠে শৈশবে দেখা স্বপ্নের ছবি। অতঃপর শৈশবের দেখা স্বপ্নটা ৬৯ বছর বয়সে পূরণ হয় হিরোয়াসার। বৃদ্ধ হিরোয়াসা ১৯ বছরের নিরন্তর চেষ্টার পরে ইসি শহরের নিজ বাসভবনে ১:২৩ স্কেলে এ ভবনটির একটি পূর্ণাঙ্গ রেপ্লিকা তৈরি করেন।

সহধর্মিণী ইকুকো (৬৬) হিরোয়াসার ৪৭তম জন্মদিনে একটি ছোট্ট বই উপহার দেন, যেখানে হিমিযি ক্যাসেলের অজস্র ফটোগ্রাফ ছিল। বইটির ভেতরে সমগ্র প্রাসাদটির একটি নকশাও ছিল, যা স্বপ্ন পূরণে উদ্যোগী করে তোলে হিরোয়াসাকে। তারপর হিরোয়াসার হাজার আয়োজন, ব্যস্ততা। ইসি প্রদেশের ইনজা শহরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে জমি কেনা। ১৯৮৯ সালে প্রথম কাজ শুরু করেন হিরোয়াসা। এরপর চাকরি-বাকরির ল্যাঠা চুকে গেলে ৬০ বছর বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের প্রান্তে নতুন জীবন। গভির মনোযোগ আর ধৈর্য দিয়ে স্বপ্নের পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। প্লাস্টিক, পাথর আর কাঠের সম্মিলনে একটু একটু করে তৈরি করতে থাকেন প্রাসাদের পিলার, ছাদ, জানালা আর সাদা রঙের দেয়াল। ১৩৩৩ সালে নির্মিত হিমাযি ক্যাসেলের যে অংশগুলো সময়ের বাস্তবতায় কালের গর্ভে হারিয়ে যায়, সেগুলোও তিনি রাখেন তার রেপ্লিকাটিতে। পাথরের বড় টুকরোকে প্রয়োজনমতো কেটে তাকে তৈরি করতে হয় সাদা পাথরের দেয়াল। ক্ষুদ্রাকৃতি এই প্রাসাদটি আয়তনে ১৬০ স্কয়ার মিটার, আর লম্বায় প্রায় ২ মিটার। এটা তৈরি করতে হিরোয়াসাকে খরচ করতে হয়েছে ১৮ মিলিয়ন ইয়েন।
প্রৌড় হিরোয়াসার ১৯ বছরের চেষ্টা আর পরিশ্রমের এ প্রাসাদ-প্রতিরূপটি সমাদৃত হয় মানুষের কাছে। কেউ দেখতে এলে তিনি আঙুল বাড়িয়ে বর্ণনা দেন নিজ হাতে গড়ে তোলা স্বপ্ন সৌধের। কোথায়, কিভাবে, কোন কৌশলে এটা তিনি তৈরি করেছেন, সেটা জানান দর্শনার্থীদের। কেউ কেউ হিরোয়াসাকে ‘লর্ড অব দ্য ক্যাসেল’ বলে ডাকেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে ফটোগ্রাফ তুলতে চান। কিন্তু হিরোয়াসা নিজেকে কেবল ক্ষুদ্রাকৃতির এ প্রাসাদটির নির্মাতা বলেই মনে করেন। আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, সত্যিকারের ‘লর্ড অব দ্য ক্যাসেল’ হলো তার স্ত্রী ইকুকো। কেননা ইকুকো ছাড়া যে এগুলো যেত না এই কঠিন পথ।
বিকালের শেষ রোদে ছোট্ট এ প্রাসাদটির গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিষ্টি রোদ। হিরোয়াসা বাগানে বসে ভালোলাগায় বুঁদ হয়ে থাকেন। আর কী আছে সুন্দর পৃথিবীতে, নিজের স্বপ্নকে বাস্তব করার চেয়ে? শ্রমে-ঘামে নিজের স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখতে।
সংবাদ সারাবেলা/নাআ/সেখা