|| বার্তা সারাবেলা/এনডিটিভি ||
হাতিটি এসেছিল খাবারের খোঁজে। মানুষের আনন্দের খোরাক হতে গিয়ে যন্ত্রণাদগ্ধ হয়ে ওকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শুধু মা হাতিটিই নয়, ওর সঙ্গে প্রাণ গেছে ওর পেটে থাকা ৬ মাসের ভ্রুন হাতিটিরও।
ওর নিরাপদ আবাস ছিল ভারতের কেরালা রাজ্যের পালাক্কাড জেলার সাইলেন্ট ভ্যালি পার্কে।খাবারের খোঁজে চলে আসে পাশের মানুষের আবাসে। আর সেখানেই ঘটে যায় ওর জীবনের এমন নিষ্ঠুর অবসান।
খাবারের জন্য এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে দেখে কিছু ‘মানুষ’ ওকে একটি আনারস খেতে দেয়। হাতির তো জানার কথা নয় ঐ আনারসের ভেতরে পুরে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু বাজি।

হাতিটি যখন তা মুখে পুরে চাপ দেওয়া মাত্রই ঘটে প্রচন্ড বিস্ফোরণ। সঙ্গে সঙ্গে আগুনে দগ্ধ হয়ে যায় গোটা মুখ। গলগলিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে রক্ত। যাতে উল্লসিত হয় ‘মানুষ’!
কিন্তু হাতিটি তখন যন্ত্রণা কমাতে ছুটে চলে গ্রামের এদিক সেদিক বেশ কয়েকদিন।যে ক্ষিদে মেটাতে এসেছিল মানুষের কাছে সেই মানুষের বিকৃত আনন্দের শিকার হতে হয় তাকে। কিছুতেই যখন যন্ত্রণা কমছিল না তখন সে নেমে পড়ে নদীতে। মুখের ভেতরে পানি নিয়ে চেষ্টা করে যন্ত্রণা কমাতে।
বনকর্মকর্তাদের ধারণা, হাতিটিকে বাজিতে ভরা আনারসটি খাওয়ানো হয়েছিল এপ্রিলের শেষে কিংবা মে মাসের শুরুর দিকে। বন কর্মকর্তা আশিক আলি জানান, হাতিটির শরীরের শীর্ণকায়তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, কমপক্ষে দিন বিশেক আগে ঘৃণ্য এই কাজটি করা হয়েছিল।



আশিক বলেন, আমরা ঘটনাটি জানতে পারি ২৫শে মে। আর ঠিক তার দুইদিন পরই মারা যায় হাতিটি। তবে জানার পরপরই আমরা সুরেন্দ্র ও নিলকান্ত নামে দুটো হাতি দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম নদী থেকে ওকে উঠিয়ে আনার। কিন্তু পারিনি। অবশেষে আমাদের সবচেষ্টা ব্যর্থ আর এই সভ্যতাকে থু থু ছিটিয়ে ২৭শে মে বিকাল ৫৪টায় বিদায় নেয় হাতিটি।
ডাক্তার যখন হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন তখন তিনি ধরা গলায় বলেন, হাতিটির মধ্যে একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করেছিল। সে জানতো সে মারা যাচ্ছে। শুঁড় সহ গোটা শরীর রক্তাক্ত, যন্ত্রণায় জ্বলছিল সারা শরীর। এই অবস্থায় সে তার সন্তানের কথা ভেবে চলে যায় নদীর মাঝে।নিজের যন্ত্রণার কিছুটা লাঘব আর সেই সাথে বাচ্চাকে কেউ যাতে আঘাত করতে না পারে সেইভেবে।



এদিকে মানুষের মত দেখতে অমানুষদের এমন বিকৃতিতে ক্ষুব্ধ আবার সেই মানুষই। হাজারো মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে জানাচ্ছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। নজির হয়ে থাকার মত শাস্তি চাইছেন সেই অমানুষদের যারা এমনটা করে মিটিয়েছেন তাদের আনন্দের বিকৃত ধরণ। অনেকেই আবার অমানুষদের হয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীকূলের কাছে।