ঠাকুরগাঁওয়ে বিবর্ণ সিনেমার রূপালিপর্দা ১৬টি হলের বন্ধ ১৪টি

অব্যাহত লোকসানের কারণে হলগুলো বন্ধ হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা, মানসম্মত ছবি ও আধুনিকায়ন করে পুরোনে রূপে হলগুলোকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব

|| মোহাম্মদ ওয়াদদু হোসেন, ঠাকুরগাঁও থেকে ||

লোকসান, দর্শকদের কাছে প্রদর্শন করার মত নয় এমন ছবি, আর ইন্টারনেট সুবিধায় সিনেমা দেখার সুযোগ-সবমিলিয়ে দর্শক নেইত জেলার কোন সিনেমা হলে। জেলার ১৬টি সিনেমা হলের মধ্যে ১৪টিই বন্ধ করে দিয়েছে মালিকরা। যে দুটো চলছে তাও বন্ধ হতে পারে যে কোন সময়ে।

লোকসান মেটাতে আর দর্শক না হওয়ায় বন্ধ হওয়া হলগুলো ভেঙে নির্মান করা হয়েছে হয়তো বসতবাড়ি, না হয় স্কুল-কলেজ কিংবা বিপনীবিতার। সব মিলিকে ঠাকুরগাঁওয়ের সিনেমাসংস্কৃতি এখন বিপন্নপ্রায়।

প্রশাসন বলছে, সিনেমা হলগুলোকে ফের চালু করতে আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে যা যা করার সবকিছু করতে চান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বলাকা সিনেমা হল বন্ধ করে সেখানে করা হয়েছে সিমেন্টের গোডাউন ঘর। মৌসুমী সিনেমা হলটিকে করা হয়েছে স্কুল। আলেয়া সিনেমা হল এখন বিপনীবিতান। অন্য সিমেনা হলগুলোর কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি।

সিমেনা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্মহীন হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট অনেকে। বর্তমানে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ১টি ও পীরগঞ্জ উপজেলায় ১টি সিনেমা হল চালু রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও জেলা । একসময় এ জেলায় ১৬টি সিমেনা হল চালু ছিল। দর্শক হারানোর কারণে ১৪টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে চালু রয়েছে দুইটি। তারও বন্ধের পথে।

সাংস্কৃতিক কর্মী মাসুদ আহম্মেদ সুবর্ণ বলেন, একসময় বেদের মেয়ে জোসনা, রুপবান, খায়রুন সুন্দরী, কিরনমালা ছবি দেখার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দর্শকরা মিনিবাস, ট্রাক্টর, পিকআপ বা ভ্যান ভাড়া করে ঠাকুরগাঁওয়ের সিমেনা হলগুলোতে আসত। উপচে পড়া দর্শকের টিকিট পাওয়া নিয়ে চলত প্রতিযোগিতা। সিনেমা প্রেমীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো হল মালিকদের। তখন জেলার সবকটি সিনেমা হল সারা বছরই থাকত জমজমাট। ঠাকুরগাঁওয়ের সিনেমা হলের সেই সোনালি অতীত এখন ইতিহাস মাত্র।

শহরের হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাহিদ রেজা বলেন, সিনেমা হলগুলোতে নিম্ন মানের ছবি প্রদর্শন, নোংরা পরিবেশ হওয়ার কারণে দর্শকরা হলগুলো থেমে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে ইন্টারনেট জগতে।

পুরনো দিনের সিনেমাগুলো ভুলতে বসেছে সাধারণ মানুষ। বর্তমান প্রজন্ম এক সময় সিনেমা হল বলতে কোনো জিনিস ছিল সেটা বলতেই পারবে না।

জেলা উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু বলেন, হলগুলোকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে আনতে হলে উন্নত মানের সিনেমা তৈরি করতে হবে। যাতে দর্শকরা আবারও হলমুখি হয়। সিনেমা হলগুলোকে পুণরায় চালু করতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার।

বলাকা সিনেমা হলের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিনেমা হলটি যখন চালু ছিল সেখানে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে সংসার চলত। লোকসান হওয়ায় মালিক হলটি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে হলটি গোডাউন ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মৌসুমী সিনেমা হলের মালিক মনিরুল ইসলাম বলেন, দর্শকশূন্যতার কারণে লোকসান হয়েছে, তাই সিনেমা হল বন্ধ করে সেটি স্কুল ঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমার মতই জেলার ১৪টি সিনেমা হলের মালিক লোকসানের কারণেই হল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে ২টি চালু রয়েছে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে শিগগিরই।

তিনি বলেন, সিমেনা হলগুলোকে সচল রাখতে সরকার থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু আমরা কোন সহযোগিতা পাইনি। অব্যাহত লোকসানের কারণে হলগুলো বন্ধ হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা, মানসম্মত ছবি ও আধুনিকায়ন করে পুরোনে রূপে হলগুলোকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন মনিরুল ইসলাম।

ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম এপ্রসঙ্গে বলেন, হল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বন্ধ হওয়া হলগুলো পুনরায় চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। হলগুলো চালু করার ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সেই ব্যবস্থাও করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন