অন্যরকম ডেস্ক:
পাখির মতো মানুষেরও ডানা থাকে, যা মানুষ লুকিয়ে রাখে বুকের ভেতরে। হাজাররঙা স্বপ্ন দিয়ে গড়া এ ডানা। একসময় শিকড়-বাঁকড় ছড়িয়ে বড় হয়। ছুঁয়ে যায় গোটা দুনিয়াকে। তেমনি এক স্বাপ্নিক মানুষ ডেরেক রাবিলো। জন্মান্ধ এ সার্ফার বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছেন পৃথিবীর হাজার চোখকে।
ডেরেক রাবিলো তখন মায়ের পেটে। আগত সন্তানকে নিয়ে বাবার কত কি স্বপ্ন। ছেলে বড় হলে ভুবনজয়ী ক্রিয়াবিদ হবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তারও যে ভুল হয়! রাবিলো জন্মালেন অন্ধ হয়ে। হতাশায় ডুবে যাওয়া পিতার স্বপ্নের চোখটাও যেন অন্ধকারে ঢেকে গেল। কিন্তু জলের ছলছল শব্দের মোহন ডাক অন্ধ রাবিলোকে ঘরে আটকে রাখতে পারল আর কৈ! গত বছর মাত্র ২০ বছর বয়সে আমেরিকার ওহিও রাজ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং আর ভয়াবহ বানজাই পাইপলাইনে সার্ফিং সম্পন্ন করে নিজের স্বপ্নকে পূরণ করলেন। মানুষের কাছে হয়ে উঠলেন উৎসাহ আর উদ্দীপনার উজ্জ্বল স্বক্ষর।
১৯৯২ সালের ২৫ মে ব্রাজিলের সমুদ্রঘেঁষা গোয়ারাপারি গ্রামে জন্ম নেন এই জন্মান্ধ সার্ফার। মাত্র ৩ বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে, জলের সঙ্গে জলকেলি শুরু হয় তার। সমুুদ্রের গর্জন মাতম জাগায় শিশু রাবিলোর মনে। বাবার হাতে একটু একটু করে সার্ফিং প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী এ তরুণ ওহিও রাজ্যের উত্তর তীরবর্তী পাইপলাইনে সার্ফিং করে সবার প্রশংসা কুড়ান। এ সময়ে আরেক সার্ফার মাকুয়া রোথম্যানের সঙ্গে রাবিলোর সার্ফিংয়ের ভিডিওটি ইউটিউব থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে গেলে রাবিলোর সুনাম আর অসাধ্য সাধনের কাহিনীটিও ছড়িয়ে যায় বিশ্বময়। অন্ধ এ মানুষটি হয়ে ওঠেন হাজার অন্ধ তরুণের বেঁচে থাকার দীপশিখা।
রাবিলোর এ অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। ব্যায়ান জেনিংস নামের এক চলচ্চিত্রকার রাবিলোকে নিয়ে নির্মাণ করছেন ‘বিয়ন্ড সাইট : দ্য ডারেক রাবিলো স্টোরি’। এ ডকুমেন্টারিটিতে মূলত রাবিলোর বেড়ে ওঠা, তার অন্ধত্ব, অন্ধত্ব জয়ের গল্পই লিপিবদ্ধ করবেন পরিচালক। পরিচালকের সঙ্গে রাবিলোর যখন দেখা হয়, তখন রাবিলো মাত্র ১৫ বছরের বালক। ব্রাজিলের সমুদ্রতীরে যে বেশিরভাগ সময়ই কাটাতেন সার্ফিং করে। তখন এক অন্ধ কিশোরের প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন ঢেউকে অতিক্রম করার সাহস ও আত্মবিশ্বাস মুগ্ধ করে তোলে জেনিংসকে। ওহিওর পাইপলাইনে তরুণ রাবিলো সার্ফিংয়ের সাম্প্রতিকতম এ কৃতিত্ব হাজার দর্শকের মতো বিস্মিত করে জেনিংসকেও। তিনি বলেন, সার্ফারদের জন্য পাইপলাইনে সার্ফিং করা খুবই বিপজ্জনক। রাবিলো যেখানে সার্ফিং করেছে, সেখানে যে কোনো বাস বা অন্যকিছু রেখে দিলে নিমেশে তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তার চোখের দৃষ্টি নয়, মনের জোরই তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে বলে আমার বিশ্বাস। গেরি লোপেজ, টম কারেন, ডেমিয়েন হবগুডের মতো প্রফেশনাল সার্ফারও বিস্মিত জন্মান্ধ এ তরুণের কর্মকাণ্ডে। জেনিংস আরও যুক্ত করে বলেন, রাবিলোর বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ওকে নিয়ে, তা তো বটেই, তার চেয়ে আরও বেশি কিছু করে ফেলেছে এ তরু ণ।
সংবাদ সারাবেলা/নাআ/সেখা