করোনা রুখতে স্বাস্থ্যক্ষমতা বাড়াবে যেসব খাবার

|| যাপিতজীবন ডেস্ক ||

ঝড়-বৃষ্টির এই ঋতুতে আবহাওয়া যারপর নাই খেয়ালি। কখনো প্রচণ্ড গরম। কখনোবা প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শীতল হয় ভূভাগ। এই সময়ে এমনিতেই লেগে থাকে জ্বর স্বর্দি আর হাঁচি-কাসির মত অসুখ বিসুখ। এবারে এগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ। ঋতুভিত্তিক অসুখ বিসুখ আর করোনা-এসব কিছু থেকে বাঁচতে চিকিৎসা বিজ্ঞানি আর গবেষকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ এড়াতে চাইলে বাড়াতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

ঘন ঘন চরিত্র বদল করায় এখন পর্যন্ত করোনার কোন প্রতিষেধক কিংবা ওষুধ কোনটাই ঠিক করে উঠতে পারছেন না বিজ্ঞানি ও গবেষকরা। তারা বলছেন, করোনা যেহেতু বিশেষ করে বাড়ির শিশু ও বয়স্কদের বেশী সংক্রমিত করছে, তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রথমেই বাড়াতে হবে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সঙ্গেতো মাস্ক-সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহারতো রয়েছেই।

অনেকদিনের কোনও অসুস্থতা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত মদ্যপান, ঘুমের ব্যাঘাত ও ধূমপানরে মত কারণগুলো সাধারণভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আর সেই সুযোগটাই নেয় করোনাভাইরাস। শরীর শক্তপোক্ত হলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী থাকলে তাকে কাবু করতে পারে না এই ভাইরাস। সুতরাং নিয়মিত শরীরচর্চাতো করতেই হবে। পাশাপাশি পাতেও রাখতে হবে এমন কিছু খাবার, যা শরীরকে পোক্ত করবার পাশাপাশি রোগবালাইও ঠেকাবে।

তেতো খাবার

ভাইরাসকে দূরে রাখতে প্রতি দিন পাতে রাখুন তেতো। তা সে নিম পাতা কিংবা করোলা ও উচ্ছের মত কিছু। এ সবে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। যা আপনার শরীরকে পোক্ত রাখে ও এই গরমের সময় বাতাসবাহিত রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত প্রোটিন

শরীর পোক্ত ও সুঠাম রাখতে প্রোটিন চাই প্রচুর। তাই প্রতি বেলাতেও পাতে রাখুন উদ্ভিজ্জ বা প্রাণীজ, যে কোনও ধরণের প্রোটিন। সাধারণত মাছ, মাংস, সয়াবিন, মুসুর ডাল, ডিম এ সব আপনার শরীরে যোগাবে প্রোটিন। যা মজবুত করবে আপনার শরীর।

কাঁচাহলুদ-লবঙ্গ-দারুচিনি

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, যে কোন ভাইরাসজনিত অসুখ বিসুখ রুখতে হলে দরকার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতা অর্জনে আপনাকে সহায়তা করতে পারে এই বঙ্গের রান্নায় ব্যবহৃত কিছু খাবার যা মশলাপাতি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঁচা হলুদ-লবঙ্গ-দারুচিনি। রান্নায় দেওয়া লবঙ্গ ও দারচিনির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মহামারির বিরুদ্ধে বাড়িয়ে তোলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা।

কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান। যা আপনাকে অনেক অসুখের হাত থেকে বাঁচায়। কাঁচা হলুদ বেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খান। না হয় টুকরো করে কেটে চিবিয়ে খান প্রতিদিন।। বিশেষ করে শ্লেষ্মাজনিত অসুখের বিরুদ্ধে বড় অস্ত্র হতে পারে এই কাঁচা হলুদ।

রসুন

এই সবজিতে রয়েছে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা আপনার রক্তকে রাখে পরিশুদ্ধ। সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খান। স্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, এতেই নাকি দূর হবে অর্ধেক রোগবালাইয়ের শঙ্কা। অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ঠাসা এই সবজির রয়েছে ধ্বনন্তরি কিছু গুণ। বেশ খানিকটা সময় পেট খালি থাকবার পর রসুন খেলে এর রস সহজেই আপনার শরীরকে নির্বিষ বা ডিটক্সিফাই করতে পারে। ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, ও হাঁপানির মত ভাইরাস ও সংক্রমণজনিত অসুখে ঠেকাতে রসুনের বেশ কার্যকরি। শ্লেষ্মাজনিত অসুখ ঠেকাতেও কার্যকর রসুন শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বাড়েয়ে তোলে অনেকগুণে। তাই রসুন রাখুন করোনার এই সময়ের প্রতিদিনকার রান্নাতে।

ফলফলাদি ও সবুজ শাকসবজি

পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদানযুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। তাই শরীরকে স্বাভাবিক শক্তির জোগান দিতে নজর দিতে হবে ভিটামিন সি-খনিজ উপাদানযুক্ত খাবারের দিকে। খেতে হবে প্রতি দিন অন্তত ১০০ গ্রাম ওজনের যে কোনও ফল। পাতে রাখতে হবে পর্যাপ্ত সবুজ শাকসবজি।

টক দই

টক দইয়ে রয়েছে ফারমেন্টেড এনজাইম। যা খাবার হজমের জন্য ভীষণ কার্যকরি। এর প্রো বায়োটিক উপাদান যেমন সুস্থ রাখে লিভারকে তেমনই নিয়ন্ত্রণে রাখে খারাপ কোলেস্টেরলকেও। অনেকেই দুধ খেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে আস্থা রাখতে পারেন দইয়ের উপর। দুধের তুলনায় দই অনেক বেশি সহজপাচ্য। শরীরকে নির্বিষ বা ডিটক্সিফাই করতে দই হচ্ছে লা জবাব। শরীরে জমানো বিষ যত সরানো যাবে, সুস্থতার পথে ততই এগিয়ে থাকা সম্ভব হবে।

পানি

শরীরে পানির ঘাটতি হলে কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর এই পানিশূন্যতা থেকে হওয়া নানা সমস্যায় জেরবার শরীর সহজেই ভাইরাসের শিকার হয়। তাই পানির বিষয়ে সচেতন হন। পারলে ফোটানো জল খান। জল শরীরের বিষ বার করে শরীরকে সুস্থ রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন