|| হাসান তামিম, ঢাকা ||
দেশীয় প্রযুক্তিতে ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য সানি জুবায়ের। সংকটাপন্ন রোগীদের ফুসফুসের অকার্যকরিতায় কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চালিয়ে নিতে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। রোগীর ফুসফুস যদি কাজ না করে তাহলে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটা ভেন্টিলেটর করে দেয়।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় দেশে ভেন্টিলেটরের পরিমান খুবই কম৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে ৫০০ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৫০টি মিলিয়ে বারোশ’ ৫০টি ভেন্টিলেটর রয়েছে৷ এগুলোর বাজার মূল্যও অনেক বেশি৷
নিজের উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটরকে সাশ্রয়ী জানিয়ে সানি জুবায়ের বলেন ” আমরা বাইরের দেশ থেকে যে ভেন্টিলেটর আনি এগুলোর দাম অনেক বেশি৷ সেসব ভেন্টিলেটর বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়৷ শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজই নয়, এগুলোতে অনেক ক্যাটাগরি থাকে৷ কিন্তু করোনা আক্রান্তের জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো ভেন্টিলেটরের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেওয়া। আর এই কাজটা করা হয় যান্ত্রিক উপায়ে। আমার তৈরী ভেন্টিলেটর এই কাজটাই সম্পূর্ণভাবে করতে সক্ষম৷”
তিনি বলেন, ভেন্টিলেটরের নলটা যখন শ্বাসযন্ত্রে ঢুকানো হবে, তখন নির্দিষ্ট সময়ে বাতাসের চাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার সিলেক্ট করে দেওয়া যাবে৷ আর রোগী ভেদে এই হিসাবটা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে৷ আমি যদি রেস্পিরেটরি রেট ২৪ করে দেই তাহলে প্রতি মিনিটে ফুসফুস ২৪ বার খুলবে ও বন্ধ হয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করবে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেবে।
আমি আমার সিস্টেমটাকে এমনভাবে তৈরি করেছি, যেটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম৷ তবে এটার কাজ হবে শুধু শ্বাসক্রিয়াকে যান্ত্রিকভাবে চালনা করা৷
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের শুধু শ্বাসক্রিয়া চালানোর কাজে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমার এই ভেন্টিলেটরটি শুধু এই কাজটাই করতে সক্ষম। তাই এটি সহজলভ্য এবং অনেক করোনা রোগীকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব৷
সানি জুবায়েরের তৈরী ভেন্টিলেটরটির মূল কাজ যেহেতু অক্সিজেন প্রবেশ করানো আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে নিয়ে আসা তাই এটাকে সম্পূর্ণভাবে একটা কন্ট্রোলার এবং রাজবেরি পাই নামের একটি সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম৷ বিদ্যুৎ চলে গেলে ভেন্টিলেটরের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য এটিতে আইপিএস ব্যবহার করা যাবে৷
এমন একটি ভেন্টিলেটার মাত্র সাত হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করা সম্ভব৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আরো ডেভেলপ করা যাবে বলে জানান সানি৷
সরকারের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে খরচ আরো কমানো সম্ভব বলে মনে করেনি এই ক্ষুদে উদ্ভাবক। এই মুহূর্তে সরকারী সহায়তায় এটি বানিজ্যিক ভাবে তৈরী সম্ভব বলেও জানান তিনি৷
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/04/dhaka-college.jpg?resize=318%2C198&ssl=1)
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। জুবায়েরের এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যে কোন ধরণের প্রশাসনিক সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। আগামীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এমন অসাধারণ উদ্ভাবন করবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।#