করোনায় সংক্রমিত শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর

পর্যটন নগরী’ খ্যাত কোটবাড়ি এলাকার ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকায় আগের মতো দর্শনার্থীদের উপস্থিতি মিলছে না।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা ||

সারা দেশের মতো কুমিল্লাতেও পর্যটনশিল্পেও লেগেছে মহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস বন্ধ ছিলো জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্র। তবে গত কয়েক মাস ধরে জেলার সকল দর্শনীয় স্থানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হলেও আগের মতো দেখা মিলছে না পর্যটকের। বিশেষ করে কুমিল্লার ‘পর্যটন নগরী’ খ্যাত কোটবাড়ি এলাকার ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকায় আগের মতো দর্শনার্থীদের উপস্থিতি মিলছে না। এখানে দর্শনার্থীদের আসা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এতে কমেছে সরকারের রাজস্বও। এছাড়া দর্শনার্থী কম থাকায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সরেজমিনে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন বছরের শুরু হলেও দর্শনার্থীদের তেমন চাপ নেই। আগের মতো কোলাহল নেই নানান বয়সী মানুষের। কর্মব্যস্ততা নেই পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরও। যদিও অন্য বছরগুলোতে এমন সময় দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিত খেতে হতো এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের। সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গত বছরের ১৭ই মার্চ থেকে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর দীর্ঘ ৬ মাস পর ওই বছরের গত ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হয় জেলার এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। ওই সময় সকলের প্রত্যাশা ছিলো শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়াসহ জেলার সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলো দর্শনার্থীদের কোলাহলে প্রাণচাঞ্চল্যময় হয়ে উঠবে। তবে এমনটা হয়ে উঠেনি।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় অন্তত ২৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উন্মোচিত হওয়া ১২টির মধ্যে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে সরকার রাজস্ব আয় করছেন। অন্যগুলো এখনো বিনা খরচে দেখতে পারছেন পর্যটকরা। শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮১৫ টাকা। আর করোনা মহামারির আগে গত বছরের প্রথম আড়াই মাসে (১৬ মার্চ পর্যন্ত) সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪০ টাকা। তবে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পর চালু হলে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শেষ সাড়ে তিন মাসে রাজস্ব আয় হয় মাত্র ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ টাকা।

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরে মোট দর্শনার্থী এসেছিল ৭৮ হাজার ৬৩০ জন। আর বিদেশি পর্যটক এসেছিল ১৭২ জন। তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আয় হয় ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ১২৫ টাকা। সেখানে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মোট দর্শনার্থী আসে ৪১ হাজার ৮৫৭ জন। বিদেশি পর্যটক আসে মাত্র ৬ জন। এদের কাছ থেকে রাজস্ব আয় হয় ৮ লাখ ২০ হাজার ৭১৫ টাকা।

তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থী কম আসায় রাজস্ব আয়ও অনেক কমে গেছে। অন্যান্য বছরের এই সময়ে আমরা পর্যটকদের চাপে খাবার খাওয়ার সময়ও পেতাম না। অথচ এবার তেমন কোনো চাপই নেই। আর আমরা সকল দর্শনার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করছি। মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

জেলার নাঙ্গলকোট থেকে শালবন বিহারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আরমান হোসেন বলেন,  করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এই প্রথম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। তবে আগের মতো এখন আর মজা লাগছে না। আগে পর্যটকদের কোলাহলে চারদিক মুখর থাকতো। এখন তেমন প্রাণচাঞ্চল্য নেই।

আরেক দর্শনার্থী ফাতেহা আক্তার বলেন, করোনা আমাদের জীবনের গতি অনেক বদলে দিয়েছে। গত বছর এই সময়ে দর্শনার্থীদের যেই পরিমাণ ভিড় ছিলো, এবার তার চার ভাগের এক ভাগও নেই। তাই ঘুরতে এসে আগের মতো ভালো লাগছে না।

ময়নামতি জাদুঘর এলাকার খুদে ব্যবসায়ী সালাম মিয়া বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ ৬ মাস সব বন্ধ ছিলো। ভেবেছিলাম নতুন করে সব শুরু হচ্ছে, পর্যটকদের ঢল নামবে। এতে আমার আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিক্রি একেবারেই কম।

আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কুটির শিল্পের দোকানটি করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটিয়েছি। কিন্তু এখন সব চালু হলেও আগের মতো মানুষ আসছে না। এখনও লোকসানে আছি।

সংবাদ সারাদিন