ঘরবন্দিত্বে কমছে হ্যাপি হরমোন বাড়ছে অবসাদ-বিরক্তি

|| গোবিন্দ শীল ||

বন-বাদাড়, পাহাড় কিংবা সমুদ্রধারে মানুষের কেন ভাল লাগে? এমনকি সারাদিন বাড়িতে কাটানোর পর বিকেলে খোলা আকাশের নীচে কিছুটা সময়ের জন্য গেলেও মনটা ভাল হয়ে যায়। কিন্তু কেন? এসব নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়। আলোচনা ছোট রাখার জন্য মূল কয়েকটি বিষয় তুলে ধরছি।

মানুষের শরীরে ভালো ও মন্দ, দু ধরণের হরমোন রয়েছে। মন্দটির মধ্যে প্রধান হলো কর্টিসল। ভালোগুলোর মধ্যে সেরোটনিন, ডোপামাইন ও অক্সিটোসিন অন্যতম। এগুলোকে হ্যাপি হরমোন বলা হয়। ঘরে বসে থাকলে মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীর সচলতা থেকে বঞ্চিত হয়। এসময় কর্টিসল হরমোন নি:সৃত হয়, যা শরীর ও মনের নানাবিধ ক্ষতি করে, কমিয়ে দিতে পারে আয়ু, বাড়াতে পারে ওজন। শরীরকে অবসাদগ্রস্ত করতে এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমিযে ফেলতে এই হরমোন খুবই কার্যকর।

যখন আমরা কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে যাই, তখন হাঁটা-চলার জন্য শরীরের নানা অঙ্গ নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, শরীর অক্সিজেন নিতে থাকে। ফলে, সাথে সাথে কর্টিসল কমে গিয়ে সেরোটনিন নি:সৃত হতে থাকে। ভালো কোন দৃশ্য দেখলে হ্যাপি হরমোনগুলো তৈরী হয় শরীরে । তখনই মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে আমরা অক্সিজেন নেই, ছাড়ি কার্বন-ডাই অক্সাইড। আর গাছেরা করে ঠিক উল্টোটা। অর্থাৎ আমাদের ফুসফুসের অর্ধেকটা রয়ে গেছে গাছের কাছে। এভাবেই আমরা প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে আছি।

মানুষের রক্তের প্রধান উপাদান যে হিমোগ্লোবিন, সেটিও তৈরী হয় লোহা দিয়ে, আর লোহা পা্ওয়া যায় সূর্য ও তারায় (পৃথিবীর সকল লোহা সূর্য থেকেই এসেছে)। অর্থাৎ সূর্য ছাড়া হিমোগ্লোবিন তৈরী হওয়া সম্ভব ছিল না। সাধারণ বিজ্ঞান ছাড়া্ও ইয়োগিক বিজ্ঞানেও এসব নিয়ে সবিস্তার আলোচনা আছে।

যাহোক, প্রাকৃতিক পরিবেশের (যেখানে মানুষ বসবাস করেছে শিল্পসভ্যতার(?) আগ পর্যন্ত) সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক খুবই গভীর ও তাৎপর্যময়। সমুদ্রের ধারে অথবা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে জলরাশির দিকে তাকালেও বিষন্ন মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুটা সময় কাটান, তাঁরা অন্যদের থেকে বেশি সৃজনশীল (চারুকলায় না যেয়ে উপায় আছে?)।

আর এর আসল কারণ হচ্ছে, পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ আড্ডা, অনেকদিন পর বন্ধু-আত্মীয়ের সাথে দেখাতে হ্যাপি হরমোন নি:সৃত হয়। এছাড়া প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ব্রেইনের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স (কপালের ঠিক পেছনে) বেশ আয়েশ বোধ করে। এতে করে ব্রেইনের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে যায়। এই প্রক্রিয়া ব্রেইনের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় অনেকগুন।

মেডিটেশন্ও ঠিক একই কাজ করে। এই আলোচনা হবে আরেকদিন।

দীর্ঘদিন ঘরে থেকে আমরা অসুস্থ বোধ করছি। হাফিয়ে উঠেছি। হাসফাঁস করছে আমাদের মন-শরীর। হাঁটা-চলা করতে না পেরে অনেকের রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, কারো হচ্ছে ঠিক উল্টোটা, বেড়ে যাচ্ছে রক্তে চিনির পরিমাণ। প্রকৃতির সাথে যে দূরত্ব আমরা নির্মাণ করেছি, সেটি কমিয়ে আনা আমাদের মন ও শরীরের জন্য যারপর নাই জরুরী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন