|| যাপিতজীবন ডেস্ক ||
বিশ্বের ২১০টি দেশের মানুষ আজ আক্রান্ত নতুন অচেনা ভাইরাস করোনায়। এ পর্যন্ত প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ জন মানুষ। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ দুই হাজার ৮৪৬ জন। আমাদের দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কতজন তা জানা না গেলেও এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে ৪ হাজার ৯৯৮ জনকে। আর মারা গেছে এপর্যন্ত ১৪৪ জন।
এই অনিয়ন্ত্রিত এই পরিস্থিতিতে কী করা দরকার, যাপিত জীবনের পথপদ্ধতিই বা কেমন হবে এনিয়ে মানুষ দিশেহারা। প্রতিষেধক আবিস্কারে চলছে মরিয়া চেষ্টা। অনেকেই দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। তারপরও নতুন এই ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে স্বাস্থ্যনির্দেশনা দিয়েছে তাই এখন পর্যন্ত মেনে চলতে বলা হচ্ছে মানুষকে।
যা জানা জরুরি
ভাইরাস সংক্রমিতদের মধ্যে যাদের সামাণ্য ও মাঝারি মাত্রার কাশি জ্বর রয়েছে এমন রোগীদের বেশীর ভাগই দুই থেকে তিন সপ্তাহে ভাল হয়ে যাচ্ছে। তবে বুড়োমানুষ কিংবা যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্যসমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের অবস্থাটা বেশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তা নিউমোনিয়ার মত অবস্থায় গিয়ে ঠেকছে। তবে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলছে, সংক্রমিতদের বেশীর ভাগই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
সাধারণ জ্বর ও করোনাভাইরাস : একই উপসর্গ কিন্তু আতঙ্কটা আলাদা
জ্বর স্বর্দি কিংবা করোনাভাইরাস? রোগি ও চিকিৎসক প্রথমদিকে উপসর্গগুলোকে একইভাবে দেখে থাকেন। প্রাথমিক স্তরে কী ধরণের পরীক্ষা দরকার কতটা দু:শ্চিন্তার এগুলো নিয়েও কিন্তু তেমন হেরফের হয় না। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস এর ড. গ্যারি লেরয় বলছেন, ‘একই সময়ে আপনি তিনটি আলাদা ভাইরাস বয়ে বেড়াতে পারেন। যেগুলোর উপসর্গ প্রায় একই ধরনের। কিন্তু এগুলো নিয়ে উদ্বেগের মাত্রাটা কিন্তু এক নয়।’
তাহলে বড় বিপদটা কি? এবং আমরা কেনইবা এগুলোকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেব?
করোনায় আক্রান্ত হলে করণীয় কি?
অসুস্থতা বোধ করলে সরাসরি চিকিৎসকের দফতরে না যাওয়াই ভাল। কেননা আপনার সংস্পর্শে এসে আরো অনেক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে ডাক্তারকে ফোন করুন। যেতে হলে কোথায় তা জেনে নিন এবং নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই বাড়ির বাইরে বের হোন। এরআগে যে কাজটি অবশ্যই করতে হবে, তা হচ্ছে নিজেকে বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
ড. গ্যারি লেরয় বলছেন ‘জ্বর, কাশি এবং গুরুতর শ্বাসকষ্ট-এই তিন উপসর্গ থাকলে; বাইরে থেকে আসা কোন কেউ কিংবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারো সংস্পর্শে গিয়ে থাকলে-“দ্রুতই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।”
কম অসুস্থতা রয়েছে এমন রোগীদের বাড়িতে রাখতে হবে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে এমনদের ক্ষেত্রে বাড়তি পরিচর্যা নিতে হবে। এবং বুড়ো মানুষ ও শিশুরা যারা কিনা অন্য আরো অসুখে আক্রান্ত—এমন অবস্থায় শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিষেধক
নিজেকে বাঁচাতে সাবান দিয়ে ভাল করে বারবার হাত ধুতে হবে। মুখে নাকে হাত দেওয়া যাবে না। দিলেও কুনুইয়ের দিকটা ব্যবহার করতে হবে। জনবহুল এলাকা থেকে দূরে থাকতে হবে। একজন থেকে আরেক জনকে কিছুটা দূরে দাঁড়াতে হবে।
সর্বপোরি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতাকে জোরালো রাখতে হবে আপনাকেই। যদি আপনি করোনাকে দূরে রাখতে চান।
সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, হাততো ধোয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু যেসব জিনিস আপনি হাত দিয়ে ধরছেন তাতেই থেকে যাচ্ছে জীবানু। যা আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে। কারণ ব্যবহার্য দ্রব্য যেমন প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের জিনিসপত্রে করোনাভাইরাস দুই থেকে তিনদিন বেঁচে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বলছে, ফোন, কিবোর্ড এবং ট্যাবের মত বেশী ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
আর তা করতে হলে যন্ত্রগুলো বন্ধ করে নিতে হবে। এরপর ৭০ ভাগ মদ রয়েছে এমন কোন ক্লিনার দিয়ে তা ভালভাবে মুছে নিতে হবে। এ পরামর্শ দিয়েছে প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপেল।
পরিচিত শত্রু
কোভিড ১৯ সম্পূর্ণ এক নতুন ভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট অসুখ। জ্বরের মত এই অসুস্থতায় ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে দুই লাখের বেশী মানুষ মারা গেছে।এই সংখ্যার চেয়ে বেশী মানুষ জ্বর বা জ্বরসংশ্লিষ্ট অসুস্থতায় প্রতি বছর মারা যায়।
করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রথম চারমাসে বিশ্বে প্রায় ৪ হাজার তিনশ’ মানুষ মারা যায়। অথচ জ্বরে প্রতি বছর মারা যায় দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ। এসব তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
সাধারণ জ্বর আর নতুন ভাইরাস করোনার এই পার্র্থক্য হয়তোবা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে আমাদের। কারণ জ্বর আমাদের কাছে পরিচিত একটা অসুখ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রতিদিন বলছেন, টুইট করছেন, “কেন আরো বেশী মানুষ এমন জ্বরে মারা যাবে। তারপরও বলছেন, ‘কোনকিছু বন্ধ রাখার দরকার নেই, জীবন ও অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতেই চলতে দিতে হবে। এভাবেই ভাবতে হবে আমাদেরকে!”
কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দু:শ্চিন্তার শেষ নেই। কীভাবে নতুন এই ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার ঠেকানো যাবে। কীভাবেই বা ঠেকানো যাবে এমন জ্বরে মারা যাওয়ার হার।
তারা বলছেন, এই মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো নাও যেতে পারে। কারণ এটি ইতোমধ্যেই মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কোভিড ১৯ এর রাশ টেনে ধরার সুযোগ একটাই আর তা হচ্ছে এর চিকিৎসা খুঁজে বের করা।
কতটা ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস?
জ্বরে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত দশমিক এক শতাংশ। আর এই জ্বরে প্রতি বছর আক্রান্ত হয়ে থাকে লক্ষ কোটি মানুষ। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন এই ভাইরাস নিয়ে এখনো চলছে গবেষণা। জানার চেষ্টা চলছে এর গতি প্রকৃতি। গবেষকরা বলছেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার এখনি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। কারণ আক্রান্তের ধরণটিকে মারাত্বক হওয়ার আগে বোঝা যাচ্ছে না। অসুস্থতার মাত্রা বেশী না হলে কেউই যাচ্ছেন না পরীক্ষা করাতে। অনেকেই আবার লুকোচ্ছেন। অনেক সময় আবার বেশী অসুস্থদের নিয়ে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে।
তবে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত যেসব রোগী শনাক্ত করা গেছে এবং যারা মারা গেছেন সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের হার অঞ্চলভেদে নূন্যতম এক শতাংশেরও কম। আবার কোথাও সর্বোচ্চ চার শতাংশের উপরে। তবে আশার কথা এই যে, নতুন এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশীর ভাগেরই মৃদু ও মাঝারি মাত্রার অসুস্থতা থাকছে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যেই তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন।