রামপাল মোংলাতে বাড়ছে লবনসহনীয় বোরোর ফলন

বাগেরহাটের রামপাল-মোংলায় তীব্র লবণাক্ততা সত্বেও বোরো ধানের আবাদ বাড়ছে। লবন সহিষ্ণু জাত, উন্নত বীজ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সঠিক বীজ নির্বাচন ও সেচ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতি বছরেই বাড়ছে বোরোর আবাদ ।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট ||

বাগেরহাটের রামপাল-মোংলায় তীব্র লবণাক্ততা সত্বেও বোরো ধানের আবাদ বাড়ছে। লবন সহিষ্ণু জাত, উন্নত বীজ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সঠিক বীজ নির্বাচন ও সেচ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতি বছরেই বাড়ছে বোরোর আবাদ ।

কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার জেলায় ৫২ হাজার ৮’শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টরে জমিতে অতিরিক্ত আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫ ভাগ হাইব্রিড জাতের বলে বাগেরহাট জেলা কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস জানিয়েছেন।

রামপাল-মোংলা জেলার মধ্যে অধিক লবনাক্ত এলাকা হওয়া সত্বেও এখানেও লক্ষ্যমাত্রার অধিক বোরোর আবাদ হয়েছে। লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান ব্রি-৬৭ ও বিনা ধান ১০ জাত সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি বিভাগের পরামর্শ, যথাসময়ে সার, বীজ সরবরাহ, ন্যায্য মূল্য ও কৃষি যান্ত্রিকিকরণের ফলে আবাদ বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন। তবে লোকবল অর্ধেকের কম থাকায় মাঠপর্যায়ে নিবীড় পরিচর্যা ও সেবা দেয়ার কাজটি মাঝেমধ্যে ব্যহত হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।

রামপাল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৯ টি ইউনিয়নে মোট আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫ হেক্টর। তা বৃদ্ধি পেয়ে আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। গৌরম্ভা ইউনিয়নে হাইব্রিড জাতের ৪৪৫ ও উফশী ৮৫ হেক্টর। উজলকুড় ইউনিয়নে হাইব্রিড ২ হাজার ১০৫ ও উফশী ২৬০ হেক্টর। বাইনতলা ইউনিয়নে হাইব্রিড ৭৬০, উফশী ১৮০ ও স্থানীয় ০৫ হেক্টর। রামপাল সদর ইউনিয়নে হাইব্রিড ২৪০ ও উফশী ১৬৫ হেক্টর। রাজনগর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৩৭ ও উফশী ১১ হেক্টর। হুড়কা ইউনিয়নে হাইব্রিড ০৩ হেক্টর। পেড়িখালী ইউনিয়নে হাইব্রিড ০১ ও উফশী ০১ হেক্টর। মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে হাইব্রিড ২৮ ও উফশী ০৬ হেক্টর। বাঁশতলী ইউনিয়নে হাইব্রিড ০১ ও উফশী ০২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

তবে গোবিন্দপুরের কৃষক হাওলাদার মারুফুল হক, ভরসাপুর আইপিএম ক্লাবের সভাপতি আনসার আলীসহ অনেকেই জানান, কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আরও নিবীড় যোগাযোগ ও পর্যবেক্ষণ করলে অবস্থার আরও উন্নতি করা যেত। তবে সার্বিকভাবে আবাদ ভালো হয়েছে, পোকামাকড় দেখা যায়নি কিন্তু ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। ইঁদুর গাছ কেটে দিচ্ছে। এতে বেশ ক্ষতি হচ্ছে। আমরা স্ব-উদ্যোগে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। মোংলা উপজেলার ক্ষেত্রেও অনুরূপ চিত্র পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী মন্ডল বলেন, বিভিন্ন কারণে এবছর বোরো’র আবাদ বেড়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ গুলো হলো, আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনের কারণে কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। নতুন করে বাঁশতলী ও মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে আবাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রণোদনা পুনর্বাসনের মাধ্যমে ১ হাজার ৩৭০ জন্য কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে ১ হাজার কৃষককে হাইব্রিড এসএলএইটএইচ ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান ব্রি-৬৭ ও বিনা ধান ১০ জাত সরবরাহের বৃদ্ধি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উপর আস্তা বৃদ্ধি, সার, বীজ সঠিক সময়ে সরবরাহ, ন্যায্য মূল্য ও কৃষি যান্ত্রিকিকরণের ফলে আবাদ বেড়েছে। কৃষক যাতে বেশি করে ফলন বৃদ্ধি করতে পারেন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২০২০ অর্থ বছরে বোরো’র আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। ২০২১ সালে তার বেড়ে দাড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টর যা গত বছরের চেয়ে ২৭৫ হেক্টর বেশি। চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭০৮ মে. টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১৮ হাজার ৫৮৫ টন যা বেড়ে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২২৩ মে. টানে।

বাগেরহাট জেলা কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ্ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন, ছলতি বছর জেলায় ৫২ হাজার ৮’শ ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লখ্যমাত্রা থাকলেও হয়েছে ৫৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে চিতলমারী উপজেলায় অপেক্ষাকৃত বেশী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লখ্যমাত্রার অধিক বোরো ধানের ফলন হবে।” তার ভাষায়,”৫.৭ মেট্রিকটন হারে এবার জেলায় কমপক্ষে ৩ লক্ষ ৯২ হাজার ৬১৭ মেট্রিকটন বোরো ধান উৎপাদন হবে। এব্যাপারে মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক কৃষকদের সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সংবাদ সারাদিন