মাল্টা ও কমলা চাষে সফল সাদুল্লাপুরের জুয়েল

প্রথম বছর মাল্টা ও কমলা বিক্রি করে তেমন একটা অর্থ উপার্জন না হলেও মাল্টা ও কমলার চারা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেন। চলতি মৌসুমে তিনি আরো দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা ||

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে মাল্টা ও কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া এক সফল যুবকের নাম জুয়েল (২৪)। সে উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের জুগীবাড়ী গ্রামের ইউপি সদস্য আনছার আলীর ছেলে এবং পলাশবাড়ী  পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র।

জুয়েল  জানান, ২০১৮ সালে বসতবাড়ির ওয়ারিং এর কাজ করে সেই টাকা জমিয়ে কৃষি অফিস থেকে দেওয়া ৬ টি মাল্টার চারাসহ ১৫ টি ফলবান মাল্টা ও কমলার চারা দশ কাঠা জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে  ৫০ টি ফলবান মাল্টা ও কমলার চারা রয়েছে। এলাকায় মাল্টাও কমলার চারার চাহিদার কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাগানের মাল্টা ও কমলার গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে নার্সারি তৈরি করেন। একই সাথে তার নার্সারিতে মাল্টা ও কমলাসহ বিভিন্ন প্রকার ফলদ বৃক্ষের চারা তৈরি করেন। তার বাগানে মাল্টা ও কমলা ধরা শুরু করলে এলাকায় মাল্টা ও কমলার চারার ব্যাপক চাহিদা শুরু হয়। ফলগুলো সুমিষ্ট হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জুয়েল।

তিনি জানান, প্রথম বছর মাল্টা ও কমলা বিক্রি করে তেমন একটা অর্থ উপার্জন না হলেও মাল্টা ও কমলার চারা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেন। চলতি মৌসুমে তিনি আরো দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

জুয়েল বলেন, আমার সব সফলতার মাধ্যম  ইউটিউব। কারণ সে ইউটিউবে মাল্টা ও কমলার চাষের ভিডিও দেখে  আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ভিডিওর নির্দেশনা অনুযায়ী আস্তে আস্তে আগাতে থাকেন। শুরুর দিকে অনেক লোক তাকে পাগল বলত, আজ সেই লোকগুলি তাকে ধন্যবাদ জানায়। জুয়েল জানান, বাগানে বর্তমানে ১২ প্রজাতের ফল রয়েছে তার মাঝে  বারি মাল্টা-১, বারি মাল্টা-২, থাইল্যান্ড মাল্টা, থাইল্যান্ডের জাম্বুরা, চায়না কমলা, নাগপুরী কমলা, দার্জিলিং এর ছাতকী, ম্যান্ডারিন, রাম রঙ্গ কমলা ইত্যাদি।

জুয়েল আরো জানায়, সরকারিভাবে পরামর্শ ও  সহযোগিতা পেলে আগামী বছর আরো দুই বিঘা জমিতে সৌদি খেজুর ও আপেলসহ নতুন মাল্টা ও কমলার বাগান করবেন। তার বাগানের গাছে প্রচুর মাল্টা ও কমলা ধরেছে। চলতি  মৌসুমে বাগানের সব মাল্টা ও কমলা বিক্রি না করে এলাকার লোকজনকে খাওয়াবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। তার মাল্টা ও কমলা চাষের খবর পেয়ে অনেকে দূর থেকে বাগান দেখতে আসছেন । বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই তার কাছ থেকে চারা কিনছেন।

সাদুল্লাপুর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা  তাঞ্জিমুল হাসান  জানান, ২০১৮ সালে কৃষি অফিস থেকে ৬ টি মাল্টার চারাসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৫ টি ফলবান মাল্টা ও কমলার  চারা লাগান জুয়েল। বর্তমানে ৫০ টি ফলবান মাল্টা ও কমলার চারা রয়েছে। এ ছাডাও চার হাজার মাল্টা ও কমলার চারা রোপন করে একজন সফল মাল্টা ও কমলা চাষী ও উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন কলেজ ছাত্র জুয়েল। তার বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা মাল্টা ও কমলা। তার এই কার্যক্রম  দেখে এলাকার অনেক যুবক আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাপারে উৎসাহ পাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন ,এখানকার মাটি, আবহাওয়া আর পরিবেশ অনুকূলে থাকায় কৃষকরা চাষাবাদে যেমন এনেছেন রকমারি, তেমনি এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর আবাদ উদ্ভাবনে। তরুণরা এই মাল্টা ও কমলার চাষকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন