নার্সারি করে সফল গাইবান্ধার শতাধিক উদ্যোক্তা

সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ও ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, বুজরুক পাকুরিয়া, কিশামত দুর্গাপুর ও তরফ জাহান গ্রামে উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে শত শত নার্সারিতে সবুজের সমাহার হয়েছে।

|| এস,এম শাহাদৎ হোসাইন ,গাইবান্ধা থেকে ||

জীবনে সফল হতে সঠিক পরিকল্পনা ও  মনোবল নিয়ে নার্সারি করে নিভৃত গ্রামের অনেক উদ্যোক্তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। গাইবান্ধার সাত উপজেলার অনেক যুবক নার্সারি করে নিজের জীবনের গতি পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ও ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, বুজরুক পাকুরিয়া, কিশামত দুর্গাপুর ও তরফ জাহান গ্রামে উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে শত শত নার্সারিতে সবুজের সমাহার হয়েছে। চারা বিক্রি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে  মালিক- শ্রমিকগণ।

১৯৮৫ সালে সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মফসেল নামের এক কৃষক ৫০ শতক জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। পরে ধীরে ধীরে তার নার্সারির পরিধি বাড়তে থাকে। তার সাফল্য দেখে গ্রামের আরও প্রায় অর্ধশত উদ্যোক্তা নার্সারি গড়ে তোলেন। নার্সারি ব্যবসায় লাভবান হয়েছে তারাও। এসব উদ্যোক্তাদের সফলতা দেখে পার্শ্ববতী খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের বুজরুক পাকুরিয়া, কিশামত দুর্গাপুর ও তরফ জাহান গ্রামে গড়ে উঠেছে আরও প্রায় ১৫০টি নার্সারি।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নার্সারির চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী হয়েছে। এসব নার্সারিতে ফলজ বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে তীনফল, ড্রাগন, রামবুটান, এভোকাডো, পিচ, আপেল, আঙুর ইত্যাদি। ফুলের মধ্যে রয়েছে ক্রিসমাস্টি, এটোলিয়াম, নাইটকুইন, এ্যারোমেটিক জুঁই, করবীসহ আরও হরেক রকম ফুলের চারা। ঔষধির গাছের মধ্যে অর্জুন, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, নিম, জয়তুন ও পাথরকুচিসহ নানা প্রজাতির গাছের চারা। কাঠবৃক্ষের মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, মেহগনি, সেগুন ও রেইন্ট্রি চারা। মসলা জাতের মধ্যে তেজপাতা, দারুচিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ। একইসঙ্গে শোভাবর্ধনজাতীয় চারার মধ্যে রয়েছে ক্যাকটাস, ছাকুল্যান্টম, পাতাবাহার, এ্যারোলিয়া প্রভৃতি। এছাড়া আরও বেশকিছু জাতের চারা রয়েছে নার্সারিগুলোতে।

 

সাদুল্লাপুর-ঠুটিয়াপুকুর রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে অনেক নার্সারি। পথের ধারে নার্সারির চারা যেন শোভাবর্ধন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এতে করে দৃষ্টি কাড়ছে পথচারীদের। খানিকটা প্রাণ জুড়াতে কেউ কেউ ঘুরে দেখেন, আবার কেউবা কিনে নিচ্ছেন নানান জাতের চারা।

উপজেলার বুজরুক পাকুরিয়া গ্রামের সততা নার্সারির মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা ছিলো। ১৯৯০ সালে ২ একর নিজের জমিতে নার্সারি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। তার নার্সারিতে প্রায় ১৫০ জাতের চারা রয়েছে। চারা উৎপাদনের পর বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ঢাকা, যশোর ও বগুড়া থেকে উন্নত জাতের চারা-বীজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এসব চারা পরিচর্যার মাধ্যমে আরও চারা উৎপাদিত হয়। এগুলো বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যে ক্রয় করে। এছাড়াও খুচরা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমিক, সার-কিটনাশক খরচ বাদে মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।

সাদুল্লাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইউনুছ আলী বলেন, উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নার্সারি বেশ লাভজনক ব্যবসা। পরিকল্পনামাফিক নার্সারি করলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

সংবাদ সারাদিন