|| মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা থেকে ||
বোরো ধান উৎপাদনে সেচ অপরিহার্য। বোরো ধানের আয়ুষ্কাল ৫ মাস। পৌষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বোরো চাষের মৌসুম। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই খাল-নদী শুকিয়ে যায়। পানির স্তর নেমে যায় নিচে। পানিস্বল্পতা সেচে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। অথচ বোরো চাষের জমিতেই বেশির ভাগ সময় পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। কুশি গজানো, গাছ সম্প্রসারণ এবং ভালো ফলনের জন্য সেচের পানি থাকতেই হয়। দেশের যেকোনো জায়গায় বোরো চাষে কৃষককে বারোশ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত সেচের খরচ দিতে হয়।
এতো দামের সেই সেচ গেলো ছাব্বিশ বছর ধরে মাত্র ২শ’ টাকায় দিয়ে আসছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের মতিন সৈকত। নামমাত্র দামে এই সেচসুবিধা তিনি দিচ্ছে এক দুই বিঘা জমিতে নয়, দেড়শ’ বিঘা জমিতে। সৈকতের নামমাত্র দামের এই সেব কৃষক পাচ্ছেন বোরো রোপণ থেকে পাকা ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত সময় ধরে।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Motin-Saikot-4.jpg?resize=1054%2C735&ssl=1)
মতিন সৈকত শুধু নিজের গ্রাম আদমপুরই নয়, পাশের পুটিয়া ও সিংগুলা গ্রামের মাঝের ১৫০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি মৌসুমজুড়ে মাত্র ২০০ টাকায় সেচের পানি সরবরাহ করে আসছেন। গেলো ২৬ বছরে বাজারে জ্বালানি তেলসহ অন্যসবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়লেও বাড়েনি মতিন সৈকতের সেচের দাম।
স্থানীয়রা বলছেন, একসময় এসব জমিতে বোরো ধান ছাড়া কিছুই হতো না। বর্ষায় কচুরিপানা, ঘাস-আগাছা জমে আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকতো। সেগুলো পরিষ্কার করতে অতিরিক্ত বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাগতো। সংশ্লিষ্ট জমির মালিকদের নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগে গণশেয়ারের ভিত্তিত্তে ২০০০ সালে আদমপুর, পুটিয়া এবং সিংগুলা গ্রামের মাঝের আড়াইশ’ বিঘা জমিতে আপুসি মৎস্য প্রকল্প এবং আদমপুর, পুটিয়া, বিটমান গ্রামের মাঝের ৪০০ বিঘা জমিতে আপুবি এবং পুটিয়াতে ১০০ বিঘা জমিতে বিসমিল্লাহ মৎস্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন মতিন সৈকত। একই জমিতে শুকনো মৌসুমে প্রায় বিনামূল্যে বোরো ধানের আবাদ, অন্যদিকে বর্ষায় মাছ চাষ করে ধানের পাশাপাশি বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কৃষককে দিচ্ছেন তিনি।
এই এলাকায় সেচের পানির মূল উৎস কালাডুমুর নদী। মতিন সৈকত ২০ বছর ধরে নদীর ১১ কিলোমিটার এলাকা পুনঃখনন করেছেন। এতে দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা এবং কচুয়া উপজেলার ৫০ হাজার বিঘা জমিতে প্রায় ১২ লাখ মণ বোরো ধান উৎপাদন সহজ হয়েছে।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Motin-Saikot-3.jpg?resize=1057%2C732&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Motin-Saikot-3.jpg?resize=1057%2C732&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Motin-Saikot-3.jpg?resize=1057%2C732&ssl=1)
এসব কাজের জন্য মতিন সৈকত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এ প্রসঙ্গে কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে কৃষি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে আমি গত ২৬ বছর ধরে পুরো মৌসুম বিঘা প্রতি মাত্র ২০০ টাকায় সেচ সুবিধা দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানান তিনি।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, মতিন সৈকত উপজেলার কৃষকদের খুব আপনজন। কৃষকদের যেভাবে তিনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন জানান, মতিন সৈকতকে দাউদকান্দির কৃতি সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রপতি অভিজ্ঞ্যানপত্র দিয়েছেন। দুই দুইবার পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে চারবার চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। আমরা মতিন সৈকতকে নিয়ে গর্বিত।