|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ ||
জেলার পোরশা উপজেলায় ১৬জন কৃষকের প্রায় ছয় বিঘা জমির বোরো ধানের সবুজ বীজতলা ঝলসে হলুদ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে অতিরিক্ত আগাছানাশক ও কীটনাশক ছিটিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের বীজতলা নষ্ট করেছেন। তিন কৃষক গত মঙ্গলবার উপজেলার সুতলী গ্রামের ওয়াসিম মণ্ডলের (৩৫) নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে পোরশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত তিন কৃষক আবদুল মালেক শাহ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মনিব আল রাজী।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, তাদের ছয় বিঘা জমিতে তাঁরা ৩০ মণের বেশি ধানের বীজ বপন করেছিলেন। ছয় বিঘা জমির বীজতলা দিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের লক্ষ্য ছিল তাঁদের। তারা জানিয়েছেন, উপজেলার ঘাটনগর ইউনিয়নের দেউপুরা, সুতলী ও দেউপুরা মাঠের ১৬ বিঘা জমিতে দেউপুরা, সুতলী, ধামানপুর ও সোমনগর গ্রামের ১৬ জন কৃষক বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেন। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পর তাঁদের বীজতলার চারাগুলো জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়ে উঠতো।
এ অবস্থায় গত রোববার কিংবা সোমবার রাতের কোনো এক সময় সুতলী গ্রামের ওয়াসিম মণ্ডল ও তাঁর লোকজন তাঁদের বীজতলায় অতিরিক্ত পরিমাণ আগাছানাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারাগাছগুলো ঝলসে দেন। ওয়াসিম মণ্ডলের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলার মালিক মনিব আল রাজী, এনামুল হক শাহ, মোস্তাফিজুর রহমান, হারুনুর রশিদ ও আনারুল হকের সোমনগর ও ধামানপুর মাঠের ১৫ বিঘা আবাদি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে উভয় পক্ষের মামলা চলছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দেউপুরা গ্রামের মনিব আল রাজীর ভাষ্য, গত মঙ্গলবার সকালে তাঁরা বীজতলায় গিয়ে দেখেন যে তাঁদের চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে ও শুকিয়ে গেছে। তাঁরা প্রথমে মনে করেন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীতের কারণে চারাগুলো হলুদ হয়ে যাচ্ছে। চারা বাঁচানোর জন্য বীজতলার আগের পানি বের করে দেন এবং শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বীজতলায় নতুন পানি দেন। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বীজতলার চারাগুলো ধীরে ধীরে আরও বেশি হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তাঁদের ধারণা, জমির আগাছানাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করে তাঁদের চারাগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ধামানপুর গ্রামের ধীরু উড়াও বলেন, বর্গা নেওয়া জমিতে ধান চাষের জন্য সোমনগর মাঠে ১০ কাঠা জমিতে আধা মণ ধান বপন করে বীজতলা তৈরি করেন। এমন এক সময় বীজতলা নষ্ট হলো, যখন নতুন করে বীজতলা তৈরির সুযোগ নেই। বাইরে থেকে ধানের চারা কিনে জমিতে রোপণ করবেন, সেই সামর্থ্যও তাঁর নেই।
আরেক কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কেউ ওষুধ না ছিটালে হঠাৎ করে চারা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখন বাজার থেকে চারা কিনে ধান লাগানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। অল্প দু-তিন বিঘা জমির চারা কিনে লাগানো সম্ভব। কিন্তু ২০০ বিঘা জমিতে রোপণের মতো চারা পাওয়া সম্ভব নয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দেউপুরা গ্রামের আবদুল মালেক শাহের ভাষ্য, ‘আমার ও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে বেশ কিছু জমি নিয়ে সুতলী গ্রামের ওয়াসিম মণ্ডলের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। তিনি বীজতলা নষ্ট করে থাকতে পারেন।’ তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীকে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়াসিম মণ্ডল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জমি নিয়ে তিন-চারজনের সঙ্গে আমার বিরোধ আছে। ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকলে ওই সব ব্যক্তির বীজতলা নষ্ট করতাম, অন্য কৃষকদের ক্ষতি করে আমার লাভ কী! যাঁরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তাঁরা নিজেরাই ক্ষতিকর কীটনাশক ছিটিয়ে বীজতলা নষ্ট করে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন।’
বুধবার সকালে ক্ষতি হওয়া বীজতলা পরিদর্শন করেন পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘বীজতলার চারা দেখে মনে হয়েছে, বীজতলায় অতিরিক্ত আগাছানাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারাগুলো নষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানা-পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আমার বিশ্বাস।’
এ বিষয়ে পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান বলেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আগাছানাশক ছিটিয়ে বীজতলা নষ্টের ঘটনায় যথাযথ তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে বিষয়টি মামলা হিসেবে নেয়া হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।