গাংনীর কৃষিজমির অর্ধেকেই হচ্ছে তামাক চাষ

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুর ||

স্বাস্থ্যঝুঁকি আর জমির উর্বরতা নষ্টের কারণ থাকলেও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে তামাকের চাষ। চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ৫৫ ভাগ আবাদী জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। লাভ বেশী হওয়ায় গেলো কয়েক বছর ধরেই কৃষক ও জমির মালিকরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও তামাক চাষীরা বিঘা প্রতি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন।এ সুযোগে তামাক উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো কৃষকের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, খাদ্যশষ্য উৎপাদনের জমি তামাক চাষের কাজে অধিক হারে ব্যবহৃত হওয়ায় এবার বোরো চাষ কমে গেছে অনেকটাই। এতে খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলার স্বীকৃতি হারাতে বসেছে গাংনী।

জেলা কৃষি উপ-পরিচালক জানান, ২০০১ সালের কৃষি শুমারী অনুযায়ী এ জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ১২৪ হেক্টর।বর্তমানে তা কমে ২৮ হাজার ৫’শ হেক্টরে ঠেকেছে। তবে সংশ্লিষ্ট অন্য সূত্র বলছে, স্বাভাবিক নিয়মের দ্বিগুণ হারে এ উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। এর প্রধান কারণ অস্বাভাবিক ভাবে নতুন করে গড়ে ওঠা ইটভাটা ও তামাক চাষে ঝুঁকে পড়া।

সংশ্লিষ্ট কৃষি আফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে ১৫ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। এ বছর গাংনী অঞ্চলে আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ৫ হাজার হেক্টর, ঢাকা টোব্যাকো ৬ হাজার হেক্টর এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে (কমবেশী) তামাক চাষ করা হয়েছে।

গাংনী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা গাংনী উপজেলায়। এই উপজেলায় ২৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হচ্ছে। ভোমরদহ, ধর্মচাকী, ভরাট, দুর্লভপুর, তেতুলবাড়ীয়া, হিন্দা, ইত্যাদি মাঠে প্রচুর তামাক চাষ হয়েছে। এখানকার জমির বর্গামূল্য এমনই যে শুধু তামাক চাষ সময়ে (সাড়ে ৪ মাসের জন্য) ১ বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকায় লিজ দেয়া হয়।

স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, এভাবে যদি কৃষি বিভাগ উদাসীনতা দেখায় তাহলে সাধারণ চাষীদের তামাক চাষ করা ছাড়া আর উপায় কি? গাংনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের গাফিলতি, প্রশিক্ষণে স্বজনপ্রীতি, সরকারী প্রণোদনা তালিকা করায় গড়িমসি, আধুনিক যন্ত্রপাতি বিতরণে অনিয়ম, কর্তব্য অবহেলার কারণে তামাকের চাষে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা।

তামাক চাষী গাংনী উপজেলার ধর্মচাকী গ্রামের লিটন ও ভোমরদহ গ্রামের মোমিনুল এবং মালসাদহ গ্রামের মহিবুল ইসলাম জানান, বিঘা প্রতি জমিতে তামাক চাষে বীজ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ মোট ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। যা তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সহজ শর্তে দিয়ে থাকে। একারণে সাধারণ চাষীরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম শাহাবুদ্দীন আহাম্মেদ জানান, তামাক চাষে জমির উর্বরতা কমে যায়। এমন একটা সময় আসবে যখন তামাক চাষের ফলে উপজেলায় আর কোন ফসলের চাষ করা সম্ভব হবেনা। তারপরেও বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় চাষীরা বোরো চাষে এগিয়ে আসছে। পাশাপাশি ইতোমধ্যেই অনেক চাষী সবজি চাষে লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে।

সংবাদ সারাদিন