বলিউড অভিনেতা ইরফান খান আর নেই

|| আনন্দ সারাবেলা ডেস্ক ||

বলিউড অভিনেতা ইরফান খান মারা গেছেন। বুধবার সকালে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে কলোন ইনফেকশনে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনডিটিভি। গেল কয়েক মাস ধরেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন এই অভিনেতা। কয়েকমাস আগে টিউমারের চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে মুম্বাইয়ে ফেরেন তিনি। জীবনের শেষ সময়গুলো প্রিয়জনদের সান্নিধ্যেই ছিলেন ইরফান খান।

মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরফানের ব্যক্তিগত মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন ‘খান এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন’। ইরফানকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানান এই মুখপাত্র। পরে ইরফানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা নাকচও করে দেন তিনি।

মায়ের মৃত্যুর মাত্র চার দিনের মাথায় নিজেও পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন ইরফান খান। গেল শনিবার সকালে রাজস্থানের জয়পুর শহরে ৯৫ বছর বয়সে ইরফানের মা সায়ীদা বেগম মারা যান। করোনায় লকডাউনের কারণে ইরফান মুম্বাই থেকে জয়পুর যেতে পারেননি, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৃত মাকে শেষ বিদায় জানান তিনি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইরফানের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “হ্যাঁ, এটি সত্য। কোলন ইনফেকশনের কারণে ইরফান খান মুম্বাইয়ের কোকিলাবেনের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। তিনি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে আছেন। তার শক্তি ও সাহস তাকে লড়াই করতে এবং এ পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছে। আমরা নিশ্চিত তার অসাধারণ মনোবল ও তার শুভাকাঙ্ক্ষিদের প্রার্থনা তাকের দ্রুত রোগ মুক্ত করবে।”

২০১৮ সালের মার্চে ইরফান খানের নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার ধরা পড়ে। এর পরপরই চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন যান। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের জন্য তিনি ভারতে ফিরেন। এরপর তিনি আবার লন্ডনে চলে যান। সেখানে অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর সেপ্টেম্বরে আবার দেশে ফেরেন।

ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলার দুই মাস পর তিনি এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি খোলা চিঠি লেখেন। যেখানে তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসা নেয়ার সময় তার কষ্টের তীব্রতা এবং জীবনের অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তার ভক্তরা তাকে বাধ ভাঙা সমর্থন জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বলিউড তারকা এবং ভারতের রাজনীতিবিদরা।

ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পেয়েছিল। এটিই তার অভিনীত শেষ ছবি। স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। অভিনয় করেছেন বলিউড ও হলিউডের বহু ছবিতে। বাংলাদেশে বহুল আলোচিত একটি চলচ্চিত্র ‘ডুব’-এর মূল ভূমিকাতেও ছিলেন তিনি।

সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন যিনি ‘পিকু’ চলচ্চিত্রে তার সাথে অভিনয় করেছেন তিনি এক টুইটারে বলেন, “চলচ্চিত্র দুনিয়ার এক অবিশ্বাস্য প্রতিভা…বিনীত সহকর্মী…কর্মঠ কর্মী… খুব জলদি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন…অনেক বড় শূন্যতা তৈরি করে দিয়ে চলে গেলেন।”

বলিউড অভিনেত্রী রাভিনা ট্যানডন এক টুইটে বলেছেন, “চমৎকার একজন সহ-অভিনেতা, অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন অভিনেতা এবং একজন সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন তিনি।”

ভারতে টুইটারের টপ ট্রেন্ডের প্রথম চারটিই ইরফান খান বিষয়ক। অনেকেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

২০১৩ সালে ‘পান পান সিং তোমার’ নামে একটি বায়োপিক সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য মি. খান ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান। ওই চলচ্চিত্রের একজন অ্যাথলেটের জীবনী নিয়ে নির্মিত হয়েছিল যিনি পরবর্তীতে ডাকাত হয়ে যান।

১৯৬৭ সালের ৭ই জানুয়ারি জয়পুরের একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম ইরফানের। ১৯৮৪ সালে তিনি নয়া দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি) ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে এসেছিলেন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে স্ত্রী সুতপা সিকদার ও দুই সন্তান, বাবিল ও আয়ান খানকে রেখে চিরবিদায় নিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের এই খ্যাতিমান অভিনেতা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন