পরীমনি সখ্যে আটক হলেন চয়নিকা চৌধুরী

পরীমনির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গে কাজভিত্তিক আলোচনা হয়। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে পরীমনির সঙ্গে কোনো দিনই আলাপ করিনি। আর আমিও তার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাইনি, জানতেও চাইনি।’ বৃহস্পতিবার রাত থেকে চয়নিকা চৌধুরীর ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভ পাওয়া গেছে।

|| আনন্দ সারাবেলা ||

চলচ্চিত্র নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় চয়নিকা চৌধুরী গাড়ি থেকে আতঙ্কিত হয়ে বলছিলেন, ‘আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমি কিচ্ছু জানি না।’ গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, “যেহেতু পরীমনির সঙ্গে তাকে প্রায়ই দেখা গেছে, সেজন্য আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে এসেছি। তবে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।”

শুক্রবার বিকালে সময় টিভির সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরছিলেন চয়নিকা চৌধুরী। সঙ্গে তার ছেলেও ছিলেন। তখনই গাড়িতে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। টেলিভিশনের ভিডিওতে দেখা যায়, চয়নিকা চৌধুরীর গাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পরে নারী পুলিশের একজন সদস্য গাড়ির সামনে চালকের পাশের আসনে থাকা চয়নিকার পাশে উঠে পড়েন। কিছুক্ষণ পর গাড়িটি চলে যায় মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের দিকে।

চয়নিকার স্বামী নির্মাতা অরুণ চৌধুরী বলেন, “টেলিভিশনে ইন্টারভিউ শেষে ও বাসায় ফিরছিল। পথের মধ্যে আটকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের ছেলে অনন্য প্রতীকও সঙ্গে ছিল। কোথায় নেওয়া হয়েছে- তা এখনও নিশ্চিত জানি না। ছেলের ফোন নম্বরও বন্ধ পাচ্ছি।”

ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি, পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, “আমি খবরে দেখলাম, তাকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী কারণে নেওয়া হয়েছে সেটা তো এখনও জানা যায়নি। আমরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।”

চয়নিকা চৌধুরী ও পরীমনির মধ্যে যে সখ্য রয়েছে, তা সবারই জানা। উত্তরা বোট ক্লাব-কাণ্ডের পর পরীমনির পাশে সব সময় দেখা গেছে তাঁকে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় বনানীর বাসা থেকে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম নায়িকা পরীমনিকে আটক করা হয়। রাত আটটার পর তাঁকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় পরীর সঙ্গে আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে। তবে পরীমনি আটকের পর চুপ ছিলেন চয়নিকা চৌধুরী।

এ প্রসঙ্গে তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এবারের ঘটনার সময় আমি ফেসবুকে ছিলাম না। সন্ধ্যার দিকে জানতে পারি। তখন ছয়টার বেশি বাজে। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম। কিন্তু কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এর মধ্যে লাইভও বন্ধ হয়ে গেছে। র‍্যাব সদস্যরা ঢুকেছেন ওর বাসায়। তখন আমি ছুটে যেতে পারতাম, কিন্তু বাসায় ঢুকতে পারতাম না। এখানে আমার আসলে কিছু করার ছিল না। ’

পরীমনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে এই নির্মাতা বলেন, ‘পরীমনির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গে কাজভিত্তিক আলোচনা হয়। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে পরীমনির সঙ্গে কোনো দিনই আলাপ করিনি। আর আমিও তার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাইনি, জানতেও চাইনি।’ বৃহস্পতিবার রাত থেকে চয়নিকা চৌধুরীর ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভ পাওয়া গেছে।

২০০১ সালে ‘শেষ বেলায়’ নাটকের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকের নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরুর পর দুই দশকের ক্যারিয়ারে তিনশ’র বেশি টিভি নাটক নির্মাণ করেছেন

চয়নিকা। ২০২০ সালে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে নিজের প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ নির্মাণ করেন চয়নিকা। সেই সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দুজনের সখ্যতা তৈরি হয়। পরীমনি তাকে ডাকতেন ‘মম’ বলে।

গত জুন মাসে পরীমনি যখন তার বনানীর বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করলেন, তখনও এই চিত্রনায়িকার পাশে দেখা গিয়েছিল তাকে।

মাস দুয়েক আগে পরীমনিকে নিয়ে ‘অন্তরালে’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণে হাত দেন চয়নিকা চৌধুরী। অগাস্টের শেষভাবে চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরুর কথা থাকলেও পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সংবাদ সারাদিন