|| আনন্দ সারাবেলা ||
জীবনের শতবর্ষ পূর্ণ করতে পারলেন না ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা, বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’ দিলীপ কুমার। ৯৮ বছর বয়সে বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় মুম্বাইয়ের পি ডি হিন্দুজা হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারে মারা যান তিনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, শ্বাসকষ্ট নিয়ে গেলো ২৯শে জুন থেকে এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছিলেন দিলীপ কুমার। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। মাস খানেক আগেও তাকে একবার এই হাসপাতালেই ভর্তি করতে হয়েছিল তাকে। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন। কিন্তু এবারে আর বাড়ি ফিরতে পারলেন না।
কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
হিন্দুজা হাসপাতালে দিলীপ কুমারের চিকিৎসার দেখভাল করছিলেন ড. জলিল পারকার। তিনি বলেছেন, “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আমাদের প্রিয় অভিনেতা দিলীপ সাবের মৃত্যু ঘোষণা করছি।”
দিলীপ কুমারের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে পারিবারিক বন্ধু ফয়সাল ফারুকি লেখেন, “ইউ আর ফ্রম গড অ্যান্ড টু হিম উই রিটার্ন।”
অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে (বর্তমানে স্থানটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়ালার অন্তর্ভুক্ত)১৯২২ সালে জন্ম দিলীপ কুমারের। চলচ্চিত্রের নাম দিলীপ কুমার হলেও বাবা মায়ের দেয়া নাম ইউসুফ খান, তার মাতৃভাষা হিন্দকো।
পাঠানদের অন্যতম গোত্র আওয়ান পরিবারের সন্তান দিলীপ কুমাররা ছিলেন ১২ ভাইবোন। বাবার নাম লালা গুলাম সরোয়ার। বাবা ছিলেন বেশ ধনী ব্যবসায়ী। ফলের ব্যবসা ছিল তার। পেশোয়ার ও মহারাষ্ট্রের দেওলালিতে ছিল নিজস্ব বাগান।
দিলীপ কুমার লেখাপড়া করেন দেওলালির বিখ্যাত বার্নস স্কুলে। ত্রিশ দশকের শেষ দিকে ইউসুফ খানের পরিবার স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে চলে আসেন। চল্লিশের দশকের শুরুতে দিলীপ কুমার পুনেতে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। তিনি একটি ক্যান্টিন চালাতেন এবং স্থানীয় বাজারে শুকনো ফল সরবরাহ করতেন।
১৯৪৩ সালে আওধ মিলিটারি ক্যান্টিনে সে সময়ের প্রখ্যাত নায়িকা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবিকা রানির সঙ্গে পরিচয় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দেবিকা রানীই তাঁর নাম রাখেন দিলীপ কুমার।
দেবিকা রানী ছিলেন বোম্বে টকিজের অন্যতম মালিক। বোম্বে টকিজের সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’ মুক্তি পায় ১৯৪৪ সালে। আর সেই সিনেমাতেই রুপালি পর্দায় প্রথম উপস্থিতি দিলীপ কুমারের।
প্রায় ছয় দশকের ক্যারিয়ারে ‘আন্দাজ’, ‘আন’, ‘ক্রান্তি’, ‘শক্তি’, ‘কারমা’, ‘সওদাগর’, ‘দেবদাস’ এবং ‘মুঘল-এ-আজম’সহ বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে হিন্দি সিনেমায় দোর্দন্ড প্রতাপে নিজের উপস্থিতি ধরে রাখেন দিলীপ কুমার। ভারতের মত বাংলাদেশেও ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। একটি বয়সের দর্শকদের হৃদয়ে এখনও উজ্জ্বল তার স্মৃতি।
বলিউডের এই ‘বিষাদের মহানায়ককে’ শেষবার পর্দায় দেখা গেছে ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ সিনেমায়।
সেসময়ের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী সায়রা বানুকে ১৯৬৬ সালে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। তাদের বয়সের পার্থক্য তখন ২২ বছর। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই।
ব্যক্তিগত জীবনে দিলীপ কুমার ছিলেন ভীষণ খেয়ালি, কিছুটা নিভৃতচারীও। হিন্দকো ছাড়াও ফার্সি, হিন্দি, উর্দু, পশতু এবং ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারতেন তিনি।
ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা কমিয়ে দুদেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের জন্য দীর্ঘদিন কাজ করছেন এই অভিনেতা। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে কাজ করেছেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায়।
দিলীপ কুমার বাংলাদেশে এসেছিলেন নব্বইয়ের দশকে। সে সময় এদেশের ভক্তদের ভালোবাসায় প্লাবিত হন তিনি। তার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হন এদেশের ভক্তরা।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সবচেয়ে বেশি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও তার নাম রয়েছে।
ফিল্ম ফেয়ার আটবার পেয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। মনোনীত হয়েছেন ১৯ বার। ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৮০ সালে মুম্বাই শহরের সাম্মানিক শেরিফ পদটি অলংকৃত করেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন ভারত সরকারের সম্মাননা পদ্মভূষণ ও দাদা সাহেব ফালকে। পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করেছে ‘নিশান-এ-ইমতিয়াজ’ সম্মাননায়।