চলে গেলেন ঋষি কাপূর শোকবিপর্যস্ত বলিউড

|| আনন্দ সারাবেলা ডেস্ক ||

ইরফান খানের চলে যাওয়ার দু’দিনও পেরোয়নি। চলে গেলেন বিলউডের আরেক নক্ষত্র ঋষি কাপূর। বৃহস্পতিবার সকাল না হতেই বিদায় নিলেন এক সময়ের ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল এই নায়ক অভিনেতা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিেলেন মুম্বইয়ের হাসপাতালে। ঋষির বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৭ বছর। জন্ম ১৯৫২ সালে।

সংবাদমাধ্যমকে তাঁর বড় ভাই অভিনেতার রণধীর কাপূর তাঁর মারা যাওয়ার খবর জানান। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন ঋষি। বিদেশে এক টানা চিকিৎসার পর গত বছর দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সংক্রমণ বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বুধবার সকালে শ্বাসকষ্ট বাড়ায় এইচ এন এন রিলায়েন্স হাসপাতালে ফের ভর্তি করা হয় অভিনেতাকে। এইতো দু’দিন আগে চলে গেলেন অন্যমাত্রার এক অভিনেতা ইরফান খান। এরপর ঋষি কাপূর। এভাবে কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই দুইজনের চলে যাওয়া যেন মেনে নিতে পারছে না বলিউড।

ঋষির মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টুইটে শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। তিনি বলেছেন, “সে চলে গেল! ঋষি কাপুর…চলে গেল…এইমাত্র চলে গেল…আমি বিপর্যস্ত!”

ঋষির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বহুধা প্রতিভার মানুষ , সদাহাস্য ঋষি।

ঋষির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে করা টুইটে ভারতীয় কংগ্রেসের এমপি রাহুল গান্ধী বলেছেন, “আরেকজন কিংবদন্তি অভিনেতা ঋষি কাপুরও চলে গেলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য ভয়ানক একটি সপ্তাহ। একজন চমৎকার অভিনেতা, কয়েক প্রজন্ম ধরে বহু ভক্ত অনুরাগী আছে তার, তার অভাব খুব অনুভূত হবে। এই শোকের সময়ে তার পরিবার, বন্ধুদের ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি আমি।”

শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। অনেক ছবিতের ঋষির নায়িকা হেমা মালিনী, বন্ধু রজনীকান্তও।

এক বিবৃতিতে ঋষি কাপুরের পরিবার বলেছে, “দুই বছর লিউকেমিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার পর আমাদের প্রিয় ঋষি কাপুর আজ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে শান্তিপূর্ণভাবে চলে গেছেন। আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতির এই সময়ে আমরা এই বিশ্ব যে কঠিন ও সমস্যাজনক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাও স্মরণে রেখেছি। প্রকাশ্যে চলাফেরা করা ও একত্র হওয়ার বিষয়ে বহু বিধিনিষেধ আরোপিত আছে। আমরা তার ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষি ও পরিবারের বন্ধুদের অনুরোধ জানিয়ে বলছি, বলবৎ থাকা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।”

হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের বিনোদন দিয়ে গেছেন।

রাজ কাপূর ঘরানার ধারাবাহিকতায় ঋষির প্রথম ছবি ‘মেরা নাম জোকার’। সেটা সেই শিশুবয়সে ১৯৭০ সালে। প্রথম ছবিতেই মেলে জাতীয় পুরস্কার। যা কিনা ঋষির জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছিল। ১৯৭৩ এ একেবারেই ভিন্ন ধারায় উপস্থিত হলেন ‘ববি’ ছবিতে। ‘ববি’ ঝড়ে গোটা বলিউড টালমাটাল। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে স্বীকৃতিটা ধরে রেখেছিলেন আজীবন।

কয়েক প্রজন্ম ধরে বলিউড চলচ্চিত্রে রাজত্ব করা কাপুর পরিবারে সন্তান ঋষির জন্য ১৯৫২ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর, মুম্বাইয়ে। বাবা রাজ কাপুর ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত অভিনেতা ও পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম।

শেষ ছবি ‘১০২ নটআউট’। সহ অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। ঋষির মৃত্যুতে সেই অমিতাভের টুইট, ‘‘আই অ্যাম ডেসট্রয়েড।’’ ঋষি কাপূরের চলে যাওয়া তাঁকে এতটাই বিপর্যস্ত করেছে।

ঋষি কাপূরের আত্মজীবনী ‘খুল্লাম খুল্লা: ঋষি কাপূর আনসেন্সরড’ বিশ্ব চলচ্চিত্রে এক ঐতিহাসিক দলিল হয়েই থাকলো। ঋষি সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, তিনি একটি হলিউড ছবি ‘ইনটার্ন’-এর রিমেকের কথা ভাবছেন। যেখানে তিনি দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। অধরাই থেকে গেল তাঁর এই স্বপ্ন।

ক্যানসারের মতো মারণ রোগ ধরার পড়েও তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে হেসে খেলেই বাকি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলেন রাজ কাপূরের দ্বিতীয় ছেলে ঋষি। মৃত্যু প্রসঙ্গ এলে সহাস্যে বলতেন, ‘‘আমি আমার হাসি নিয়ে মানুষের কাছে বেঁচে থাকতে চাই। কান্না আমার পছন্দ না।’’ চিকিৎসা চলাকালীন চিকিৎসকদের নানা ভাবে হাসি খুশি রাখতেন ঋষি।

দেশ জুড়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে থাকার জন্য জনসাধারণকে আবেদন করেছিলেন তিনি। এপ্রিলের শুরুতে করা সেই আবেদনই ছিল তাঁর শেষ টুইট। ঋষি বরাবরই সক্রিয় ছিলেন টুইটারে। সরস, বিতর্কিত মন্তব্যে নেটাগরিকদের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।

হুল্লোড়ে সদাহাস্যময় এই অভিনেতা যদিও প্রয়োজনে স্পষ্ট এবং রূঢ় কথা বলতে কখনও পিছপা হননি। বিভিন্ন সময়ে করা তাঁর সেই টুইটগুলিই তাঁর এই চরিত্রের এই দিকটির প্রমাণ। তবে শেষ জীবনে বাড়িই ছিল তাঁর প্রাণ। ২০১৮তে ধরা পড়ে ক্যানসার। বিদেশে চিকিৎসাসময়ে বারবার বাড়ি ফেরার কথা বলতেন তিনি। ১০ই সেপ্টেম্বর মুম্বাই ফিরে টুইট করেন, ‘‘১১ মাস ১১ দিন পর বাড়ি ফিরলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।’’ সেই বাড়িতেই আজ তিনি নেই। থাকলেন নীতু কপূর, ছেলে রণবীর ও মেয়ে রিধিমা।

আর ঋষি রেখে গেলেন প্রায় শতাধিক ছবি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘ববি’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘লায়লা মজনু’, ‘রফু চক্কর’, ‘সরগম’, ‘কর্জ’, ‘বোল রাধা বোল’ ইত্যাদি। জীবনের শেষে এসে কাজ করেছেন ইমরান হাসমির ‘দ্য বডি’ ছবিতে। শুধু জীবনের ক্ষেত্রেই নয়, নীতুর সঙ্গে সেলুলয়েডে ১২টি ছবিতে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন চিন্টু কাপূর।

গতকালই চলে গেলেন ইরফান খান। তাঁর মৃত্যু কোথাও যেন এক জায়গায় নিয়ে এল সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র তারকাদের। যাঁরা ইরফানের সঙ্গে কাজ করেছেন, যাঁরা তাঁকে দেখেছেন, যাঁরা তাঁকে কোনওদিন দেখেনি সবার মৃত্যুশোক এক। আজ সেই রাস্তায় ঋষি কপূর। এই সাম্রাজ্যের কোথাও যেন ইরফানের সঙ্গেও জুড়ে গেলেন তিনি। ডি-ডে ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তাঁরা। ঋষিকে ঘিরেও অনেকখানি তৈরি হয়েছে মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাস।

ঋষি রাজ কাপূরের ছেলে। পৃথ্বীরাজ কাপূরের নাতি। রণবীর কাপূরের বাবা। করিশমা-করিনার কাকা। নীতু কাপূরের স্বামী।

আজ বোধহয় ‘ডি-ডে’ ছবির ওয়ালি খান ও ইকবাল শেঠ মুখোমুখি হবেন এক অদেখা সেলুলয়েডে। লাইট, সাউন্ড, ক্যামেরা নয়, মৃত্যু পেরিয়ে দুই অন্তহীন প্রাণ যেন মুখোমুখি হবেন সিনে আড্ডায়।

ক্যামেরার শাটারের খচখচ শব্দ আজ বড় বেমানান।
সংবাদসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন