বন্ধ স্কুল-কলেজে সংকট বাড়ছে শিক্ষায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যখাতগুলোতে এমন শৈথিল্য অবস্থা রাখা গেলেও করোনার কারনে দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোন পরিকল্পনাই নেই বাংলাদেশসহ অনেক রাষ্ট্রেরই। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক চাপ। বিস্তর ক্ষতি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার।

|| বার্তা সারাবেলা ||

বিশ্বজুড়ে বহুদেশেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই অটোপাস, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করছে রাষ্ট্র। অথচ এসব দেশে অর্থনীতি সচল রাখার প্রয়াসে বিস্তর সংক্রমণের মধ্যেও খোলা রাখা হচ্ছে শিল্প কলকারখানা, বাজারঘাট, ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জনমানুষসম্পৃক্ত এসব প্রতিষ্ঠানে মানা যাচ্ছে না সামাজিক দূরুত্ব ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যখাতগুলোতে এমন শৈথিল্য অবস্থা রাখা গেলেও করোনার কারনে দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোন পরিকল্পনাই নেই বাংলাদেশসহ অনেক রাষ্ট্রেরই। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক চাপ। বিস্তর ক্ষতি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার।

তবে আশার কথা এরইমধ্য বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই খুলে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোনো কোনো দেশ খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের বইয়ে মনোযোগ রাখার নানা চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতির মুখে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রোববার এক টুইট বার্তায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমরা শিক্ষাব্যবস্থার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’

টুইটে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ  থাকায় শিক্ষা–সংকট দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। আমরা সবাই এ সমস্যায় পড়েছি। মহামারির কারণে বিশ্বের ১৫ কোটি ৬০ লাখ স্কুলগামী শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ সম্ভবত আর কখনোই স্কুলে ফিরবে না। মহামারি থেকে উত্তরণ কার্যকর করতে হলে সদস্যদেশগুলোকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পুনর্গঠনে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকদের বেতন আরও বাড়ানো উচিত এবং বিশ্বজুড়ে আরও বেশিসংখ্যক শিশু যেন ডিজিটাল শিক্ষার আওতায় আসতে পারে—তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেছেন, এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে চলতে পারে না। বিভিন্ন দেশের সরকার কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলা ও এ রোগের বিস্তার যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিষয়টি তিনি মানেনও বলে জানান। তা সত্ত্বেও সব কিছুর মধ্যে সবার শেষে স্কুল বন্ধ করা উচিত। আর সবকিছুর আগে স্কুল খুলে দেওয়া উচিত। তিনি স্কুল খুলে দেওয়ার আগে বিভিন্ন দেশে বার ও পাবগুলো খুলে দেওয়াকে এক ভয়াবহ ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন।

আফ্রিকা মহাদেশের কিছু অঞ্চলের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলের বাইরে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা মহামারি কেটে যাওয়ার পর আবার স্কুল খুললে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ শিশু নানা কারণে স্কুলে ফিরতে পারবে না।

জেমস এল্ডার বলেন, সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত স্কুল খোলার জন্য অপেক্ষা করা উচিত না। করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক কঠিন অবস্থা সত্ত্বেও সরকারগুলোকে তাদের শিক্ষাবিষয়ক বাজেট সুরক্ষিত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক দেশে করোনার কারণে অনেক দিন ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে। জেমস এল্ডার বলেন, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ১৮টি দেশ এবং ভূখণ্ডে স্কুলগুলো হয়তো পুরোপুরি, না হয় আংশিক বন্ধ। তার ভাষায়, বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, নিরাপত্তা, বন্ধুত্ব, খাদ্যের স্থানে জায়গা করে নিয়েছে উদ্বেগ, সহিংসতা এবং কিশোরী মেয়েদের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়।

এর আগে গত ১২ই জুলাই ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল যৌথ বিবৃতিতে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে গত ৮ই মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৭ই মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে ছুটি বাড়ানো হয়েছে। চলমান ছুটি বাড়িয়ে সবশেষ ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসজনিত বন্ধে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার বা শিক্ষণঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার তাগিদ দিচ্ছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের অনেকে যেসব এলাকায় সংক্রমণ নেই বা কম, সেসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ারও সুপারিশ করেছেন।

 

 

সংবাদ সারাদিন