|| আনিসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ||
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ও নম্বরপত্র তুলতে মাসের পর মাস দেরি করতে হচ্ছে শিক্ষার্থিদের। এই অভিযোগ বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এসব অভিযোগ মানতে চাইছেন না প্রশাসন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সনদ তুলতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মাসের পর মাস রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে আসলেও নির্ধারিত সময়ে তারা সনদ ও নম্বরপত্র পাচ্ছেন না। কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গড়িমসির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণভাবে আবেদন করে কতদিনে সনদ পাওয়া যাবে তার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে অতিরিক্ত ফি দিয়েও জরুরি ভিত্তিতে ১০ দিনের মধ্যে সনদ তোলার সুবিধা আছে। কিন্তু অনেক সময় নির্ধারিত ১০ দিনেও তা পাওয়া যায় না।
এ সময় ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করা রংপুর থেকে আসা সুমন মোহন্ত বলেন, অক্টোবর মাসের ১২ তারিখে নম্বরপত্র তুলতে আবেদন করেছি। সে হিসাবে গত ২০ দিনে তিনবার তারিখ দেয়ার পরও সনদ পাইনি। সর্বশেষ যোগাযোগ করলে আরো ২০ দিন পর যেতে বলেছে। এ নিয়ে তিনবার শুধু নম্বরপত্র তুলতে রংপুর থেকে ঢাকা যেতে হলো।
কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সুমন বলেন, প্রতিবার রংপুর থেকে ঢাকা আসতে অনেক গুলো টাকা যাতায়াত খরচে চলে যায়। রাস্তায় অন্যান্য খরচ তো আছেই। এমনিতেই বেকারত্বের কারণে আর্থিক সংকট, তার উপর এতোগুলো অর্থ খরচ মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তিনি আরো বলেন, যাতায়াতের ফলে শারীরিক ধকল তো আছেই।
সনদ ও নম্বরপত্র তোলার প্রক্রিয়া নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুইভাবে সনদ পত্রের জন্য আবেদন করা যায়; জরুরি ভিত্তিতে ৫৬৫ টাকা ফি দিয়ে বিশেষ আবেদন ও ২০০ টাকা ফি দিয়ে সাধারনভাবে আবেদন। কিন্তু অতিরিক্ত ফি দিয়েও সেবা পেতে ৮-১০ দিন লেগে যায়। আর সাধারন আবেদনের ক্ষেত্রে কত দিন লাগবে এর নির্দিষ্ট সময়কাল নেই।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, জরুরি মানেতো যতদ্রæত সম্ভব। এক্ষেত্রে ২/৩ দিন লাগতে পারে। কিন্তু ১০ দিন তো লাগার কথা না! তাহলে তো জরুরি হল না। জরুরির কথা বলে বেশি টাকা নিয়ে বিলম্ব করা কি ঠিক? তাছাড়া ১০ দিনেও সনদ পায়নি এমন শিক্ষার্থীও আছে।
তবে এসব অভিযোগের সবই নাকচ করে দিয়েছেন খোদ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহলুল হক চৌধুরী। ফোনে তিনি বলেছেন, তিন কার্যদিবসের মধ্যেই আমরা সনদ দিয়ে থাকি। আমি আজকেও তো মিটিংয়ে বলেছি, কোন ছাত্র যেন হয়রানির শিকার না হয়। সংবাদ সারাবেলা প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তুমি আগামীকাল আসো; আলাপ করো; তারপর রিপোর্ট করো। এই বলে কথা শেষ না হতেই তিনি ফোন রেখে দেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অভিযোগ অস্বীকার করলেও আব্দুল মান্নান রবিন নামের এক শিক্ষার্থীর আবেদন পত্র জমাদানের রশিদে দেখা যায়, অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে সার্টিফিকেটের জন্য তিনি আবেদন করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সার্টিফিকেট পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। বরং বিভিন্ন সময় কাজের গতি নিয়ে সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তারপরও কারো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।