উৎসব ছাড়াই এবার নতুন বই নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিভাবকেরা আর মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে গিয়ে বই নিচ্ছে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

মহামারি করোনার কারণে এবার কোন ধরনের উৎসব ছাড়াই শিক্ষার্থিদের নতুন বই দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বরাবরের মতো এবারো বিনা মূল্যের পাঠ্যবই পাচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকালে দেশের প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসায় পাঠ্যবই বিতরণ শুরু হয়েছে। সাড়ে চার কোটি শিশুর হাতে ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে ঝকঝকে নতুন পাঠ্যবই।

ছবি কৃতজ্ঞতা: মেহেরুন নাহিদ, শিক্ষক

প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিভাবকেরা আর মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে গিয়ে বই নিচ্ছে। করোনার কারণে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ বাতিল হওয়ায় এবার ভিন্ন আঙ্গিকে বই বিতরণ করা হচ্ছে। তাই স্কুলমাঠে থাকছে না শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের সেই চিরাচরিত ভিড়। থাকছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরাও। শিক্ষকরাই বিতরণ করছেন বই।

মাধ্যমিকের প্রতিটি শ্রেণির বই বিতরণের জন্য তিন দিন করে সময় দেওয়া হবে। ষষ্ঠ থেকে নবম- এ চারটি শ্রেণিতে সপ্তাহে তিন দিন করে মোট ১২ দিনে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করতে হবে। প্রথম তিন দিন বিতরণ করা হবে নবম শ্রেণির বই। এর পর ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণি, সপ্তম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির বই দেওয়া হবে। আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে অভিভাবকদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। তবে শিশুরা এলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।

প্রতি বছর গণভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এবারে করোনার কারণে বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

ছবি: পিআইডি

করোনার মধ্যেও যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজ শেষ করতে পারার মূল কারণ ছিল সিন্ডিকেটের বিলুপ্তি। গত বছর অগ্রণী প্রিন্টার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে প্রচলিত সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে অনেক কম দামে কাজ করে। একই প্রতিষ্ঠান এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণে একই নীতি নেয়। সিন্ডিকেটে না ঢুকে বাজারে কাগজের দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রার দর হাঁকে তারা। এতে বাধ্য হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও মুদ্রণে কম দর দিতে বাধ্য হয়। এতে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে এ বছর।

আবার মুদ্রণকাজ শুরুর পর কাগজের দর বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাকররা চরম বিপাকে পড়ে যান। এ ছাড়া মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদের ভেতরের পাতায় নতুন যুক্ত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বাছাইকৃত বিভিন্ন ছবি। এতে কিছুটা বেশি সময় লাগলেও সব প্রতিষ্ঠানই আগেভাগে কাজ শেষ করে মাঠপর্যায়ে বই পৌঁছাতে থাকে। ফলে সব প্রতিষ্ঠানই দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় পাঠ্যবই মুদ্রণে কাজ দ্রুত এগিয়ে যায়।

ছবি: সংগৃহিত

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বইয়ের মুদ্রণের দর এবার কম দেওয়ায় নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানো হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এনসিটিবির কঠোর তদারকি এবং গণমাধ্যমের নজরদারির কারণে শেষ পর্যন্ত মানসম্পন্ন বই দিতে সবাই বাধ্য হয়।

২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চার কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ শিক্ষার্থীকে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বিনামূল্যের বই দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে দুই কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জনকে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি এবং ইবতেদায়ি, দাখিল, কারিগরি ও মাধ্যমিক স্তরে এক কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সারাদিন