সাফল্যে সূর্যমূখী চাষ বাড়ছে হবিগঞ্জে

সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা এই ফুলের চাষ এখন উপজেলার ‍বিভিন্ন গ্রামে। বেশীর ভাগ গাছেই ফুল ধরেতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মেলায় দাবড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল।

|| খায়রুল ইসলাম সাব্বির, হবিগঞ্জ থেকে ||

সূর্যমুখী চাষ করে অনেকটাই আশার আলো দেখেছেন হবিগঞ্জ চুনারুঘাট পৌরসভার নয়ানী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আল মামুন। শুধু মামুন একা নয় তার সাফল্যে সূর্যমূখীর চাষ এখণ চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। তেলবীজের এই ফসল চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছেন এলাকার অনেকেই।

সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা এই ফুলের চাষ এখন উপজেলার ‍বিভিন্ন গ্রামে। বেশীর ভাগ  গাছেই ফুল ধরেতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মেলায় দাবড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল।

চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চুনারুঘাট পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউপিতে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করেছেন অনেকেই। যাদেরকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে বীজ ও সার।

পৌর এলাকার নয়ানী এলাকার চাষি আব্দুল্লা আল মামুন জানান, আমি আমার  জমিতে আগে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতাম। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো আমার ৩০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি সাফল্য আসবে এবং আমি লাভবান হতে পারবো।

চুনারুঘাট উপজেলার আরেক কৃষক নূরু মিয়া জানান, আগে আমার জমিতে আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢেড়শ ইত্যাদি  চাষ করতাম এবং অনেকবারই আমি লোকসানের শিকার হয়েছি। এইবছর আমাদের চুনারুঘাট কৃষি অফিসারের পরামর্শে  প্রথমবারের মতো আমার জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে এবং  কৃষি অফিস থেকে সব সময় খোঁজ-খবর রাখা ও তদারকি করা হচ্ছে আশা করছি আর ক্ষতির মুখ দেখতে হবেনা।

চাষীরা বলছেন, প্রতিদিনই শহর ও  বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন আসছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।

সূর্যমুখীর বীজ পশুখাদ্য হিসেবে হাঁস মুরগিকে খাওয়ানো হয় এবং এই বীজ যন্ত্রের সাহায্যে মাড়াই করে তেলও তৈরি করা হয় ৷ তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখীর তেল ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে বেশ পরিচিত। শুধু তাই নয় সূর্যমুখীর তেল হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর, এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।

ভিটামিন-ই এর উত্তম উৎস হলো এই সুর্যমুখী ফুলের বীজ ভিটামিন-ই এর অনেক উপকারী দিক রয়েছে যেমন ভিটামিন ‘ই’ এর ফ্রি রেডিক্যাল প্রতিরোধী বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভূমিকাই কাজ করে।  ভিটামিন ‘ই’এর ক্ষমতার মধ্যে আরও দুটো বৈশিষ্ট্য অর্ন্তভুক্ত করা যায় যেগুলো হৃদরোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন করে। এ দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদাহ নিবারণ ও মসৃণ মাংস পেশীর কোষ প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করা। মাংস পেশীর কোষ উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সাথে প্রদাহ নিবারণ ক্ষমতা এ দুটো গুণ রক্তনালীর সংকীর্ণ হওয়াকে প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান সূর্যমুখী একটি সম্ভাবনাময় ফসল। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ফসল চাষ করা হয়। বাংলাদেশেও তেল ফসল হিসেবে সূর্যমুখী আবাদ করা হচ্ছে।এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভাল এবং হৃদরোগীর জন্য খুবই কার্যকর। এই তেলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমান খুবই কম।এই মৌসুমে চুনারুঘাট উপজেলায় ২৮০ টি সূর্যমুখী প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়েছে।প্রতিটি প্রদর্শনীর জন্য কৃষকদেরকে কৃষি অফিস থেকে সার,বীজ ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।কৃষি কর্মকর্তাগন সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।সঠিকভাবে বাজারজাত ও ন্যায্য মূল্য ফেলে   ভবিষ্যতে এই ফসল চুনারুঘাটে ব্যাপক প্রসার লাভ করবে বলে আমার ধারণা।

সংবাদ সারাদিন