|| শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ থেকে ||
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পাইকারী সবজির হাট। প্রতিদিন এসব হাটের টাটকা সবজি স্থানীয় পাইকার আর কৃষকরা সরাসরি নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকার পাইকারী আড়ৎগুলোতে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জ সারাদেশের শীর্ষে। এজন্য এই জেলার উৎপাদিত সবজির চাহিদা সারাদেশে। দামেও এসব সবজি অন্যান্য জেলার সবজির চেয়ে বেশী। বিশেষ করে রাজধানীর পাইকারি বাজারে।
শীতসময়ের এসব সবজি স্থানীয় পাইকার এবং কৃষকরা ট্রাকে করে নিয়ে যান ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী এবং জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন কৃষি মার্কেটে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী, রামপাল, মাহাকালি ,চরকেওয়ার ইউনিয়নের চরমশুরাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভাসমান এসব সবজির হাট। এসব হাটে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা জমি থেকে সবজি এনে ডোপে ভরে ট্রাকে করে রাজধানীতে নিয়ে যান।
কৃষকরা বলছেন, স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করলে যে দাম পান তার চেয়ে নিজেরা রাজধানীতে নিয়ে গেলে দাম মেলে বেশী। তাই এখানকার শতকরা ৬০ জন কৃষক নিজেরাই সবজি প্যাকেট করে ঢাকার পাইকারী বাজারে নিয়ে যান। অস্থায়ী ভাসমান এসব হাটে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে সবজি প্যাকেট করায় ব্যস্ত সময় পার করেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আগেই এসব সবজি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।ভোর রাতে কারওয়নবাজার, যাত্রাবাড়ী সবজি আড়ৎ, শ্যামবাজারে তোলা হয় এই সবজি। সেখানে বিক্রি শেষে আবার তারা বাড়ি চলে আসেন দুপুরের আগেই। প্রতিদিন এভাবেই জেলার সবজি নিয়ে রাজধানীতে বিক্রি করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীলা।
বজ্রযোগিনী এবং মহাকালি, রামপাল এবং চরকেওয়ারের প্রায় ৩০ জন পাইকার এবং প্রায় শতাধিক বড় কৃষক নিয়মিত রাজধানীর পাইকারী আড়তে নিয়ে সবজি বিক্রি করছেন। তবে স্থানীয় ছোট ছোট কৃষকরা জেলার পাইকারী হাটেই এসব সবজি তুলছেন। দামও পাচ্ছেন ভালো।
সবজির পাইকার ওসমান আলী জানান, প্রায় ২০ বছর ধরেই এভাবে এসব হাট থেকে সবজি কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার এবং যাত্রাবাড়ী আড়তে সবজি বিক্রি করে আসছি। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে মুন্সীগঞ্জের সব ধরনের সবজির চাহিদা রয়েছে। বিষমুক্ত হওয়াতে ক্রেতারা বেশী দামেই কিনছেন এসব সবজি।জেলার কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে নিয়ে পাইকারী আড়ৎগুলোতে বিক্রি করে আমরাও বেশ লাভ পাচ্ছি। পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে লাভ হচ্ছে ভালোই। তিনি আরো বলেন, কৃষকরাও আজকাল বেশী পরিমান সবজি ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে কৃষকরা আরো বেশী লাভবান হচ্ছে।
কৃষক আমিনুল জানান, সদরের বড় বড় কৃষকরা এখন স্থানীয় পাইকারদের কাছে সবজি কমই বিক্রি করছেন। কারন পাইকারদের কাছে যে সবজি বিক্রি করা হয় সেই সবজি পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকার সবজি আড়ৎগুলোতে নিয়ে গেলে সব খরচ বাদ দিয়ে কেজি প্রতি ৫ টাকা বাড়তি থাকে। এছাড়াও অন্যান্য সবজি বিক্রি করেও বেশী আয় করা যায়। এজন্য এলাকার অধিকাংশ কৃষকও আমার মত সরাসরি সবজি নিয়ে ঢাকায় পাইকারী আড়ৎগুলোতে ছুটে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছে। এবছর আবহাওয়া ভালো থাকার কারনে ফলনও ভালো হয়েছে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মুন্সীগঞ্জের সবজির চাহিদা এবং দাম দুটোই বেশী। স্থানীয় পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে নিয়ে ঢাকার সব পাইকারী আড়ৎগুলোতে বিক্রি করে। পাশাপাশি জেলার কৃষকরাও এখন সবজি নিয়ে সরাসরি শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার এবং যাত্রাবাড়ী আড়তে যাচ্ছেন। এতে করে কৃষকরা বেশী আয় করতে পারছেন।