কৃষকের নেওয়া সব ঋনের সুদ এখন চার শতাংশ

|| অর্থবাজার প্রতিবেদন, ঢাকা ||

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে ও পরে নেওয়া নতুন ঋণের জন্য কৃষককে সূদ গুণতে হবে আসলের ৪ শতাংশ। প্রণোদনা হিসেবে কৃষি ঋণের সুদের এই হার কমিয়ে এনেছে সরকার। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন এই সুদহার জানিয়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১লা এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে কৃষি ঋণের জন্য কৃষককে ৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে, যেখানে এতদিন ৯ শতাংশ পর্যন্ত এই সুদ আদায় করা হচ্ছিল।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এও বলা হয়েছে, এখন থেকে গ্রাহক পর্যায়ে এই সুদ হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, কৃষকদের প্রকৃত সুবিধা দিতে সুদ হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। কৃষকেরা প্রকৃত মূল্যও পান না। এ জন্য এবার স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সরাসরি কৃষকদের থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার উদ্যোগ নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে অবশ্য বলা হয়, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দারিদ্র বিমোচন ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকগুলো। এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশ। কিন্ত মহামারী নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় কৃষকের অনুকূলে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে সুদহার কমিয়ে ৪ শতাংশ (রেয়াতি সুদ) নির্ধারণ করা হয়েছে। সব কৃষকই এ সুবিধার আওতায় ঋণ পাবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আগামীতে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে কৃষি খাতে শস্য ও ফসল চাষের জন্য কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ সরবরাহ করা ‘অত্যাবশ্যক’। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টার মত যেসব ফসলে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর, সেসব ফসল চাষে আগে থেকেই কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষি ঋণ দেওয়র নির্দেশনা রয়েছে।

এর পাশাপাশি এখন ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাক-সবজি ও কন্দাল ফসল চাষের জন্যও কৃষকের কাছ থেকে ৪ শতাংশ সুদ আদায় করা যাবে। বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ হারে সুদ ব্যাংকগুলোকে দেবে। এই সুদহার চলমান এবং নতুন ঋণগ্রহীতা- উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তবে ২০২১ সালের ৩০শে জুনের পর চলমান ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য স্বাভাবিক হারে (৯ শতাংশ) সুদ আদায় করা যাবে কৃষকের কাছ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, “মহামারীর কারণে আগামীতে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি খাতের সুদ হার কমানো হয়েছে।”

গত ১২ই এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে কৃষকের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পরপরই কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ) মেয়াদী এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার হবে ৪ শতাংশ।

মতামত দিন

  • ফেসবুকের মতামত
সংবাদ সারাদিন