আসছে ভারতের পেঁয়াজ ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক-ব্যবসায়ী

পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশের কৃষকরা এবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ না এলে দেশি পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়া যাবে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

বাংলাদেশে এখন চলছে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। এ সময় দেশি পেঁয়াজ আসতে শুরু করছে বাজারে। পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশের কৃষকরা এবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ না এলে দেশি পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছে সরকার। ভরা মৌসুমে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি তারা কানে তোলেনি।

এরই মধ্যে গেলো ২৯শে ডিসেম্বর রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় শনিবার থেকেই বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে ভারতীয় পেঁয়াজ।চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানটি দেশে ঢুকেছে। তবে পেঁয়াজের এমন ভরা মৌসুমে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির এমন সিদ্ধান্তে দেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিতে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল আওয়াল জানিয়েছেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি গ্রহণ ও এলসি খোলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধেই কয়েকজন আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি নেওয়া শুরু করেছেন।’

সোনামসজিদ স্থল শুল্ক ষ্টেশনের সহকারি কমিশনার মমিনুল ইসলাম জানান, ‘বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে থেকে নতুন এলসিকৃত ৪ গাড়ি পেঁয়াজ বন্দরে প্রবেশ করেছে। যার পরিমাণ ৬০ মেট্রিক টন। তিনি আরও জানান, পুরনো এলসি বাতিল হওয়ায় নতুন এলসিতে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।’

বছরের প্রথমদিনে শুক্রবার রাজধানীর তিনটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৩৫ টাকা দরে। মানভেদে পেঁয়াজের এ দাম অবশ্য ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরেও মিলেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পেঁয়াজের মৌসুম। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এ কারণে দাম কমছে। এ ছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়েই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) শুক্রবারের হিসাব বলছে, আমদানি করা পেঁয়াজের শুক্রবারের দর ছিল মানভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরো কমে যাবে বলে আশঙ্কা কৃষক এবং আড়তদারদের৷ সংশ্লিষ্টরা জানান, দাম আরো কমে গেলে লাভ থাকবে না, উৎপাদন খরচ ওঠানোই মুশকিল হয়ে যাবে৷ ভারত থেকে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। এভাবে ভারতকে তার সুযোগমতো রফতানি বন্ধ ও আবার চালু করার সুযোগ দিয়ে রাখলে ভারত ও সেখানকার ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে। আর বাংলাদেশের কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

এরআগে ২০১৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ভারত একইভাবে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে যায়। এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম তখন ২৫০ টাকার উপরে উঠেছিল৷ প্রায় পাঁচ মাস পেঁয়াজের বাজারে এ আগুন অবস্থা ছিল। তুরস্ক থেকে আমদানি করে এবং কৃষকরা আগাম পেঁয়াজ তুলে বাজার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এরপর ভারত সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় মার্চ মাসে।

পেঁয়াজ নিয়ে সেই মহাসংকট চলাকালে পণ্যটির জন্য ভারতের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতার বিপদ সামনে এসেছিল। বিশেষজ্ঞরা তখন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি না করা এবং বিকল্প আমদানিকারকদের প্রণোদনা ও জায়গা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানান। দাবি তোলা হয়, দেশের কৃষককে সুরক্ষা দিতে হলে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে কর বসানো উচিত।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও পেঁয়াজ নিয়ে সেই সঙ্কটের সময় একাধিকবার কৃষককে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তিন বছরের মধ্যে সরকার পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়। এ জন্য মৌসুমের সময় আমদানি নিয়ন্ত্রণের চিন্তা রয়েছে সরকারের।’

অবস্থাদৃষ্টে এখন পরিষ্কার যে, তিন বছরের মধ্যে এক বছর চলে গেলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি নেই। সরকারের দায়িত্বশীলরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন। পেঁয়াজ নিয়ে এই অব্যবস্থাপনা জারি থাকায় এর পুরো সুফল ঘরে তুলছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

 

সংবাদ সারাদিন