আলুতে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা লোকসান মেহেরপুরের কৃষকদের

সরকার যেহেতু আলু মজুদ করে না, তাই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সরাসরি ভূমিকাও নেই। মূলত এই কারণেই মৌসুমে সরবরাহ বাড়ায় কমে যায় দাম। ক্ষতিতে পড়তে হয় চাষীদের।

|| হাসানুজ্জামান, মেহেরপুর ||

দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষতিতে পড়েছে মেহেরপুরের কয়েক’শ আলুচাষী। বিঘা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। কৃষি বিভাগের হিসাবে প্রতিবছর আলু চাষ করেন জেলার প্রায় ৮০ লাখ কৃষক। দাম পড়ে যাওয়ায় চলতি বছর বড়ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আলু চাষীদের। জমি থেকে বাজার পর্যন্ত বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে তাদের।

এদিকে সরকার যেহেতু আলু মজুদ করে না, তাই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সরাসরি ভূমিকাও নেই। মূলত এই কারণেই মৌসুমে সরবরাহ বাড়ায় কমে যায় দাম। ক্ষতিতে পড়তে হয় চাষীদের।

ছবি: সংগৃহিত

পাইকারি বাজারে কৃষকেরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন মাত্র ৮ থেকে ১২ টাকা দরে। যেখানে তাদের বীজ কিনতেই খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাসময়ে আলুর দাম বেশী হওয়ায় লাভের আশায় বেশী দামে বীজ কিনতে হয়েছে। মৌসুমের সময়ের বেশী সরবরাহ ও চাষের কারণেই আলুর বাজারদর এতটা কমে গেছে। যার ফলে চাষীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এদিকে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগারের সংখ্যা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

মেহেরপুর আশরাফপুর গ্রামের আলুচাষী আহসান আলী এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকারও বেশী খরচ করে সাড়ে ৭ বিঘা আলু চাষ করেছি। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে পরিবহণ খরচ বাদ দিয়ে মণ প্রতি দাম পাচ্ছি মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, কেজি প্রতি পাইকারি ১০ থেকে ১২ টাকার চেয়ে সামান্য কম-বেশী।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ করে দিতো তাহলে আমরা চাষীরা ক্ষতি থেকে বেঁচে যেতাম।

সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আলুচাষী হাফিজুর রহমান ও আশাদুল ইসলাম বলেন, গতবছর আলুর চাষ করেছিলাম। গড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা মণে আলু কিনেছিলাম এবং লাভও হয়েছিল। কিন্তু এবছর বেশী দামে বীজ কেনায় তারা লোকসানে পড়ছেন। এখন সরবরাহ হয়ে গেছে বেশী আর দাম হয়ে গেছে কম।

ছবি: সংগৃহিত

আলুচাষী শামীম হোসেন বলেন, করোনার সময় আলুর দাম বেশী থাকায় সেই প্রভার বীজের উপর পড়ে। সেই সাথে লেবার খরচ বেশী পড়ে যায়। এতে অনেক টাকা বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে আলু চাষে। আমরা যদি ভালো দাম পেতাম তবে হয়তো ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারব।

পাইকারি আলু ব্যবসায়ী রিপন আলী জানান, কৃষকদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কম দামে আলু কিনে তারাও লোকসানে পড়ছেন। প্রতি কেজি ২০ টাকা করে কিনলে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার ১৫ টাকায় কিনলে ১০-১২ টাকায় ঢাকার পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে পরিবহণ খরচসহ তাদের মোট যে খরচ হচ্ছে, তাতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরও।

মেহেরপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ স্বপন কুমার খাঁ এ প্রসঙ্গে জানান, মেহেরপুরের মাটি অনেক উর্বর। চলতি বছরে আলুর আবাদ অনেক বেশী হয়েছে। জেলায় ১২৭৫ একর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ১২৪০ একর আলুচাষ হয়েছিল। এবার বেশি আলু চাষ করা হয়েছে। তবে বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় আলু চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন চাষীরা। স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

সংবাদ সারাদিন