করোনাকালে ঘরেই ফিরতে হলো বৃদ্ধ ধীরেন্দ্র বৈদ্যকে

|| অনলাইন প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ||

সত্তোরর্ধ মানুষ ধীরেন্দ্র বৈদ্য। অনাহারে, অল্পাহারে দেহটা যেন আর চলছিল না। ছেলে থাকা সত্বেও রাস্তাই হয়ে উঠেছিল তার ঘর। দিনের বেলা যে যা দিতো তাই দিয়েই কাটিয়ে দিতেন জীবনটা। আর গরমকালের রাতটা কাটাতে তেমন সমস্যা না হলেও শীতের রাতটা যেন যেতেই চাইতোই না তার। কনকনে ঠান্ডা কিংবা ঝড়বৃষ্টির রাতে ঠাঁই মিলত রাস্তার পাশে মার্কেটের খোলা বারান্দায়।

তবে ধীরেন্দ্র বৈদ্যের এমন যাপিতজীবনের পেছনে রয়েছে আরেক গল্প। ছেলে তাঁকে কাছেই রাখতে চাইতেন। কিন্তু শেষ বয়সে এসে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় পরিবার রেখে ছুটে আসতেন শ্রীমঙ্গল শহরে। আগোছালো জীবনকেই নিয়তি হিসেবে ধরে নেওয়ায় এই বৃদ্ধের সন্তানরাও বিরক্ত হয়ে আর ফিরে তাকায়নি বাবার প্রতি।

সংবাদ সারাবেলার এই প্রতিনিধির কাছ থেকে ধীরেন্দ্র বৈদ্যের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বাবাকে তুলে দেন সন্তানের হাতে। তাৎক্ষণিকভাবে নিজের পক্ষ থেকে কিছু নগদ অর্থসহায়তাও দেন তিনি। এবং ভবিষ্যতে ধীরেন্দ্র বৈদ্যের চিকিৎসাসহ ‘বয়স্ক ভাতা’র ব্যবস্থারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

বাবাকে পেয়ে ছেলে লিটন বৈদ্য বলেন, ‘আমার বাবা কিছুটা মানসিকভাবে আগোছালো, এক পর্যায়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঘরে রাখা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। এর আগেও আমি তাঁকে পরিবারের সাথে রাখার চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি বের হয়ে চলে আসেন। আমি আমার বাবাকে পরিবারেই রাখতে চাই। ইউএনও স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, তিনি এই করোনার সময়ে আমার বাবার ‘ঘরে থাকা’ নিশ্চিতে এগিয়ে এসেছেন এবং সরকারীভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি যে করেই হোক আমার বাবাকে পরিবারের সাথে রাখব।’

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি এর একটা সমাধানের উদ্যোগ নেই। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে তার পরিবারের খোঁজ পাই এবং ছেলের কাছে বাবাকে তুলে দেই। পরিবারটিকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান ইউএনও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন