চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষায় হিমশিম অবস্থায় জমছে নমুনা

|| অনলাইন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ||

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৯টি জেলায় নেই কোন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তের ব্যবস্থা। চট্টগ্রামে করোনার একমাত্র টেস্ট ল্যাব আছে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস বিআইটিআইডি। অথচ এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিতে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর বা পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিন আছে মাত্র দুটি। করোনা সংকট শুরুর পর এর একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধারে আনা। এই দুটি পিসিআর মেশিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। নমুনা যা আসছে তা দিনকে দিন পরীক্ষা করতে না পারায় জমছে এর সংখ্যা।

সোমবার ২০শে এপ্রিল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সমন্বয় সেলে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান নিজের ফেসবুকে করোনার নমুনা জটের এমনি চিত্র তুলে ধরেন।

ড়া. মিনহাজ নিজ তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘করোনা বিআইটিআইডিতে নমুনাজট তৈরি হয়েছে। বিভাগের অন্য জেলাগুলো থেকেও প্রচুর নমুনা আসতে থাকায় এই একটি কেন্দ্র চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই নমুনা পৌঁছানোর পরও পরীক্ষা শেষ করতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় কেন্দ্র স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। এখানে পরীক্ষা শুরু হলে এ সংকট কিছুটা কাটবে বলে আশা করছি।’

বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার মোট ১৭টি ল্যাবরেটরিতে কারোনাভাইরাস শনাক্ত করার পরীক্ষা হচ্ছে। এসব ল্যাবরেটরিতে দিনে সর্বোচ্চ পরীক্ষা হচ্ছে এক হাজার ৯০৫টি নমুনা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ জেলার ৩ কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র দুইটি পিসিআর মেশিন।

অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামেই রয়েছে ২০টি পিসিআর মেশিন। শুধু চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে পিসিআর মেশিন রয়েছে ৫টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে ৫টি সচল পিসিআর মেশিন রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম শাখা, চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমিসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ১০টির বেশি পিসিআর মেশিন রয়েছে। রয়েছে পিসিআর মেশিনে ভাইরাস পরীক্ষায় প্রশিক্ষিত জনবলও।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে ৭জন ব্যক্তি পুরো বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে এসব পিসিআর মেশিন ও প্রশিক্ষিত জনবল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার সংস্থাটি প্রকাশিত সর্বশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে বলেছে, এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যাবে ততই দ্রুত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করতে দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এদিকে বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের বিশেষায়িত এই হাসপাতালে শুরু হয় কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা। প্রায় ১১০০ টেস্ট কিট নিয়ে মাত্র দুটি পিসিআর মেশিনে এক মাস ধরে চলছে করোনার নমুনা পরীক্ষা।

বিআইটিআইডির ল্যাবপ্রধান ও ভায়রোলজিস্ট অধ্যাপক শাকিল আহমদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে শুধু দুটি পিসিআর মেশিন আছে যেগুলোতে আমরা এখন নমুনা পরীক্ষার কাজ করছি। এর মধ্যে একটি সংকট শুরুর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধারে এনেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুটো মেশিন সকাল-বিকেল দুই বেলা বসালে ১৮০টি পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু শুধু পিসিআর বা টেস্ট কিট হলেই পরীক্ষা সম্পন্ন হয় না। এ পরীক্ষার আলাদা তিনটি স্তর আছে, প্রতিটি স্তরেই আলাদা প্রয়োজনীয় উপাদান ও রিএজেন্টের প্রয়োজন হয়, যা সবসময় পাওয়া যায় না। তাছড়া চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে দৈনিক ২০০টির বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আমরা চাইলেও সীমাবদ্ধতার কারণে ১শ থেকে ১২০টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারি না। এ কারণে প্রতিদিনই বিআইটিআইডিতে বাড়ছে নমুনার সংখ্যা। এছাড়া দক্ষ জনবলের ঘাটতিতো রয়েছেই। বিকল্প ব্যবস্থা করা না গেলে আমরা নমুনাতেই চাপা পড়ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ১২ ঘণ্টা কাজ করছি। আমরা ৭জন মানুষ রাতদিন খেটে এর বেশি কোনোভাবেই পরীক্ষা করতে পারি না। এভাবে আমরা কয়দিন চালাতে পারব জানি না। আমাদেরও কোয়ারেন্টাইনে যেতে হতে পারে।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রামে বর্তমানে করোনা সামাজিক সংক্রমণ চলছে। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের লোকজনকে বেশি পরীক্ষা করছি, তাই তারা শনাক্তও বেশি হচ্ছেন। আমরা যদি পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে পারি তাহলে আরও অনেকে করোনা রোগী শনাক্ত হবে।’

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরুর পর গত ২৫ দিনে মোট এক হাজার ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৯ জন।মারা গেছেন ৫ জন।#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন