সর্বাত্মক লকডাউন ১৪ই এপ্রিল থেকে জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ

আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে লকডাউনসময়ে সারাদেশে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সকল অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। তবে কল-কারখানা বন্ধ থাকবে কি না সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি চায় পনেরা দিন

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

সারাদেশে গেলো বেশ কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত লকডাউনের মাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একে ‘কঠোর লকডাউন’ জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে লকডাউনসময়ে সারাদেশে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সকল অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। তবে কল-কারখানা বন্ধ থাকবে কি না সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

শুক্রবার গনমাধ্যমকে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে এবার কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। সংক্রমণরোধে রোধে সবাইকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য এই লকডাউন দেওয়া হবে। জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে।”

চলমান এক সপ্তাহের লকডাউন শেষের আগের দিন অর্থাৎ আগামী রোববারের মধ্যে ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রজ্ঞাপন জারি করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

এরআগে শুক্রবার নিজের সরকারি বাসভবনে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় এবং জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে সরকার ১৪ই এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, “দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার, সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোন পরিবর্তন না হওয়ায়, সরকার জনস্বার্থে আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে।”

বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৪জনের মৃত্যুর সংবাদের পর মহামারী থেকে মানুষকে বাঁচাতে সামনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়তে থাকায় গেলো ৫ই এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ই এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে শপিং মল, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তারাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

বুধবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করে সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।

গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে ১১ দফা নিষেধাজ্ঞায় সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়।

এদিকে পহেলা বৈশাখ ও রোজার আগে দোকান-পাট খুলতে কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিলেন দোকান মালিক ও কর্মচারীর। তাদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে লকডাউনের মধ্যেও দোকানপাট ও শপিংমলও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। সেই সিদ্ধান্ত মতো ৯ই এপ্রিল থেকে ১৩ই এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হয়।

দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউনের’ সুপারিশ

এদিকে সরকারের এমন কঠোর অবস্থান ঘোষণার প্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলছে, সাতদিন নয়, অন্তত দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’ ছাড়া করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মনে করছে কমিটি।

গত বুধবার রাতে কমিটির ৩০তম সভায় তাই সারা দেশে দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সভার সুপারিশ নিয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

কমিটি বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোয় ‘পূর্ণ লকডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছে লকডাউনের দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছে। 

কমিটি মনে করে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধিতে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে ১৮টি নির্দেশনা জারি হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। তাই ‘বিধিনিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার’।

শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচেষ্ট বলে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু হাসপাতালের রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ বাড়ছে, তাই হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো দরকার।

এ ছাড়া ডিএনসিসি হাসপাতাল আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে বলেও জানানো হয়।

কমিটি বলছে, করোনাভাইরাসের টেষ্ট করতে আসা ব্যক্তিদের একটা বড় অংশ বিদেশগামী যাত্রী। কমিটির মতে, বিদেশে অভিবাসী কর্মজীবী মানুষ ছাড়া অন্যদের পরীক্ষার জন্য বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। এতে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ভালো ফল এনেছে বলে উল্লেখ করেছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। বাংলাদেশেও টিকা কর্মসূচি সফল করতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিতে বেসরকারিভাবে আমদানির ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সারাদিন