|| সারাবেলা প্রতিবেদক ||
লকডাউন দিয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না করোনাভাইরাস সংক্রমণ। ঈদ উপলক্ষ্যে সাতদিনের বিধিনিষেধ শিথিল করবার পর ফের লকডাউন দেয়ার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না সংক্রমন। মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত গেলো ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড ৫২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ হাজার ৯২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর সংক্রমিতদের মধ্যে আরও ২৫৮ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসের কারণে। এতথ্য জানিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অথচ সোমবার সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি রেকর্ড ২৪৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সামান্য কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে দুঃখ জাগানো নতুন উচ্চতায়।
নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫২ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ৭৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন আরও ১২ হাজার ৪৩৯ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১০ লাখ ২২ হাজার ৪১৪ জন।
প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭শে জুন থেকেই একশ’র উপরে থাকছিল প্রতিদিন। ৭ই জুলাই তা প্রথমবারের মত ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এবার তা আড়াইশ ছাড়াল।
ভাইরাসের বিস্তার রোধের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই ৬ই জুলাই প্রথমবারের মত দৈনিক শনাক্ত রোগী ১০ হাজার ছাড়ায়। তারপর ২৭শে জুলাই রেকর্ড ১৫ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক দিনে অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত যে ২৫৮ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৮৪ জন। আর চট্টগ্রাম বিভাগে ৬১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৫০ জন মারা গেছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ লাখ ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৫২ হাজার ৪৭৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা আগেরদিন ২৯ দশমিক ৮২ ছিল।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৭২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৫৬ জন, গাজীপুরে ২৭০ জন, গোপালগঞ্জে ১৪৯ জন, কিশোরগঞ্জে ১৭০ জন, মাদারীপুরে ১৬৮ জন, মানিকগঞ্জে ১৭০ জন, মুন্সিগঞ্জে ২০১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১৪ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২৫৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১৩১০ জন, কক্সবাজারে ৩১৫ জন, ফেনীতে ১২০ জন, নোয়াখালীতে ২২১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১৬৯ জন, চাঁদপুরে ১৮০ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮৪ জন এবং কুমিল্লায় ৮৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৯৩ জন, পাবনায় ১৪৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৭৪ জন এবং বগুড়ায় ১৩৫ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে।
খুলনা বিভাগের মধ্যে বাগেরহাটে ১০১ জন,যশোরে ২২৬ জন, খুলনায় ৪৬৯ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২৫৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৩২ জন, বরিশালে ২৯৩ জন, পটুয়াখালীতে ১১৭ জন, ভোলায় ১২০ জন, পিরোজপুরে ১৩৫ জন, সিলেটে ৪১৬ জন, সুনামগঞ্জে ১২০ জন, মৌলভীবাজারে ১০৬ জন, রংপুরে ১৬১ জন, কুড়িগ্রামে ১০১ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১৩ জন এবং দিনাজপুরে ২০৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৪১ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬১ জন জনের মধ্যে ১৮ জন চট্টগ্রাম জেলার এবং খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫০ জনের মধ্যে ১৮ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩ জন, সিলেট বিভাগে ৭ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২৫৮ জনের মধ্যে ১৪৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৮ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের মধ্যে ১৩৮ জন ছিলেন পুরুষ, ১২০ জন ছিলেন নারী। ২০২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৫ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২ জনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।