|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে এক সপ্তাহের লকডাউন তথা ঘরবন্দিত্ব ঘোষণা করেছে সরকার। এরই মধ্যে চলেও গেছে লকডাউনের প্রথম দিন। ছোট বড় দোকানপাট থেকে শুরু করে শপিংমল ও সড়ক মহাসড়কে চলাচলকারী সব গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। টান পড়েছে মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের নিত্যদিনের তহবিলে। সেই সাথে বন্ধ হয়ে গেছে পেশাজীবী দিনমজুরদের কাজ। একদিকে গণ পরিবহন বন্ধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাজারঘাট চলছে সীমিত সময়ের জন্য। অন্যদিকে অফিস আদালত কলকারখানা খোলা রাখা হয়েছে পুরোদমে। উপস্থিতিও করা হয়েছে বাধ্যতামূলক। এতে করে বিপদে পড়েছেন কর্মচারী ও শ্রমিকরা। এমন লকডাউনের সময় বাড়ানো হলে কীভাবে বাঁচবেন তাই নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন দেশের এসব দিনমজুর, শ্রমিক কর্মচারী ও কম আয়ের মানুষ।
দিনমজুরি যাদের একমাত্র পেশা তারা বলছেন, লকডাউনে আমরা কাজ করতে না পারলে আমগোর বউ-ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে কিভাবে চলবো এবং কি খাওয়াবো? অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন-শপিংমল,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-দোকানপাট বন্ধ থাকলে তো বিশাল ক্ষতি, তাহলে আমরা চলবো কি করে?
সামনে রোজা, তারপরেই ঈদ। ঈদকে সামনে রেখেই বেচাকেনার ধুম পড়ার কথা। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়েছে এ বছরের প্রথম লকডাউন। এরইমধ্যে গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুর, গাজীপুর চৌরাস্তা ও বিসিক শিল্প নগরী কোনাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলা রয়েছে ছোট ছোট মুদি দোকান, ভ্যানে করে সবজি বিক্রি, সবজির দোকান, ফার্মেসি, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও তৈরী পোশাক কারখানা। বন্ধ রয়েছে শপিংমল, ও অন্যান্য দোকানপাট । সড়ক-মহাসড়কগুলোতে মটরসাইকেল, অটোরিক্সা, ইজিবাইক চললেও বন্ধ রয়েছে গণ পরিবহন।
এমনতর লকডাউনের মধ্যেই কাপড় ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখে সকালে অবস্থান নেন নিজ নিজ দোকানের সামনে। মার্কেটের পরিস্থিতি দেখতেও আসেন অনেক ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পুলিশদের টহল জোরদার করতেও দেখা গেছে। তাছাড়া লোকজনকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য সতর্ক করতে তাদেরকে হ্যান্ড মাইক নিয়ে মাইকিং করতেও দেখা গেছে।
জয়দেবপুর বাজারের সবচেয়ে বড় কাপড়ের দোকান মানিক বস্ত্রালয়ের শাড়ি বিক্রেতা কৃষ্ণ শাহা ও বস্ত্রালয়ের পরিচালক রাজীব চৌধুরী বলেন, সামনে রোজা এরপরেই ঈদ আর এখন থেকেই বেচাকেনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আবার লকডাউনে পড়ে গেলাম, এখন বেচাকেনার কি হবে? অনেক টাকার মাল ওঠানো হয়েছে। তা বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে। গতবছরের লকডাউনেই আমাদের ব্যবসার অনেক বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে। এখন বুঝতে পারছিনা লকডাউন এক সপ্তাহ থাকবে নাকি আরো বাড়বে।
অভিজাত পাঞ্জাবী হাউজের মালিক মো. রাকিব জানান, কাপড়ের দোকানসহ শপিংমল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু অন্যসব চালু রয়েছে। পাশাপাশি সড়কে চলছে গণ-পরিবহন ছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ জরুরী পণ্যবাহী পরিবহন। অন্যদিকে খোলা রয়েছে তৈরী পোশাক কারখানাসহ অন্য দোকানপাট। তাহলে করোনা ভাইরাস কি শুধু শপিংমলেই? পোশাক কারখানা থেকে কি তাহলে করোনা ছড়াবে না। এমন প্রশ্ন তার। সামনের ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানে কয়েক লাখ টাকার কাপড় উঠানো হয়েছে। বিক্রি করতে পারবো কিনা তা এখন চিন্তার বিষয়।
এদিকে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি উত্তর) জাকির হাসান বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে সবাইকে সচেতন করতে। দোকানপাট বন্ধ রাখছে কিনা, কল-কারখানাগুলোতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুরের এডিসি (সার্বিক) মামুন সরদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশনা আছে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া লকডাউনের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।