|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ তার বাসা ‘ফিরোজা’র নয়জন করোনাভাইরাতে সংক্রমিত হয়েছেন। রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের একথা জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মো. আল মামুন। তিনি বলেন, ম্যাডামসহ মোট নয়জন আক্রান্ত।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে মামুন বলেন, “আল্লাহর রহমতে ম্যাডামের ফিজিক্যাল কন্ডিশন ভালো। কোনো উপসর্গ তার নেই। জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট কোনো কিছুই নাই।”
ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শেই হবে খালেদার চিকিৎসা
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়ার কোভিড ১৯ পজিটিভ হওয়ার খবর স্বীকার করে তার রোগমুক্তির জন্য দোওয়াও চান মির্জা ফখরুল।
এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানোর পাশাপাশি তার রোগ মুক্তির জন্য দোয়াও চান মির্জা ফখরুল। তিনি খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারিরীক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা আছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তিনি এখন স্টেবল আছেন, ভালো আছেন। তার কোনো টেম্পারেচার নেই, অন্য কোনো উপসর্গও নেই।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রো্ববার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সংক্রমিত হওয়ার তথ্য জানানোর পর তা নিয়ে দলটি ছিল নিশ্চুপ। এমনকি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন দাবি করছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়ার নমুনাই নেওয়া হয়নি।
শনিবার বিকালে ডা. মামুন বেসরকারি হাসপাতালের একজন টেকনোলজিস্ট নিয়ে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় গেলে খবর ছড়িয়েছিল যে তিনি পরীক্ষা করাচ্ছেন। তবে পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেননি খালেদা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন মামুন।
রোববার নমুনা পরীক্ষার একটি প্রতিবেদন আসে সোশাল মিডিয়ায়। ‘করোনাভাইরাস পজিটিভ’ ওই প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার বলে লেখা রয়েছে।
এরপর রোববার বিকালেই গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল (শনিবার) আইসিডিডিআর,বিতে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা আজকে যেটা পেয়েছি, সেই টেস্ট রিপোর্টটা পজিটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “তার চিকিৎসা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা আছেন তারা দেশের অত্যন্ত বরণ্যে চিকিৎসক তাদের তত্ত্বাবধায়নে আছেন এবং তিনি ভালো আছেন।”
তিনি জানান, “তার চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ যদি কোনো প্রয়োজন হয়, তখন সেই ভাবেই ফারদার টিট্রমেন্টের ব্যবস্থা নেয়া হবে।“
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল (শনিবার) আইসিডিডিআর,বিতে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা আজকে যেটা পেয়েছি, সেই টেস্ট রিপোর্টটা পজেটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।”
রোগ মুক্তির জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিশেষ করে আমাদের দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের আহবান থাকবে, তারা দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য পরম করুনাময় আল্লাহ’তালার কাছে দোয়া চাইবে এবং সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে তারা যেন দোয়া করেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে, স্থানীয় মসজিদে তার জন্য দোয়া করবেন।”
খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাচ্ছি যে, এই ব্যাধি এখন যেভাবে সারা দেশে একটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সেই প্রেক্ষিতে দেশবাসীকে আমরা আহবান জানাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আহবান জানিয়েছেন যে, তার জন্য, তার মুক্তির জন্য সবাই যেন দোয়া করেন। বিশেষ করে আমাদের দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের আহবান থাকবে যে, তারা দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য পরম করুনাময় আল্লাহ’তালার কাছে দোয়া চাইবে এবং সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে তারা যেন দোয়া করেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে যে, স্থানীয় মসজিদে তার জন্য দোয়া করবেন।”
খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকা গৃহকর্মী ফাতেমাসহ অন্যদের সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “ওখানে যারা আছেন তাদের সম্পর্কে আমি বলতে পারবো না। আমরা শুধু উনারটাই জেনেছি। যেটা আমি সুনিশ্চিতভাবে বলেছি।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাগ্নে ডা. মামুন টেস্ট করা হয়নি বলে এর আগে যে তথ্য দিয়েছেন , এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি হয়ত জানতেন না। এই বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। এটা উনার কাছে জানতে চান। আমার যেটা দায়িত্ব আপনাদেরকে জানানোর সেটা আমি জানিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, ৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫শে মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।
তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগও সীমিত।