কুমিল্লায় বেড ও অক্সিজেন যেন সোনার হরিণ! 

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজসহ করোনা চিকিৎসা হয় সব হসপিটালে আইসিইউ, বেড ও অক্সিজেনের অভাবের বিষয়টি এখন সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। অক্সিজেন ও একটি বেড এখন সোনার হরিণ।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা ||

আছিয়া বেগম। বয়স ৪৫। শ্বাস কষ্ট নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। করোনা পজিটিভ হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টায় রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে সিট না থাকার কারণে সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন দিয়ে সেবা দেয়া হয়। পরে স্বজনরা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যায়।

মো. আবদুস সাত্তার। বয়স ৬০। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আছেন। পাশে ছেলে অনিক। বাবাকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে দিয়েছেন।

অনিক জানান, ভাই কালকে আসছি। একটা সিটও খালি নাই। কেউ না মরলে সিট খালি হয় না। খুব কষ্টে আছি বাবাকে নিয়ে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজসহ করোনা চিকিৎসা হয় সব হসপিটালে আইসিইউ, বেড ও অক্সিজেনের অভাবের বিষয়টি এখন সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। অক্সিজেন ও একটি বেড এখন সোনার হরিণ।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন মাসুদুর রহমান। তিনি জানান, কোরবানির ঈদের পর থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর ভিড় বাড়ছে।

স্বেচ্ছাসেবক মাসুদ আরো জানান, তিনিসহ তার সহকর্মীরা করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো অক্সিজেন ও বেড নিয়ে এত হাহাকার আর দেখেননি। প্রতিদিন ৪-৫ শ রোগী আসছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আসিফ ইমরান জানান, ১৭৬ জন রোগীকে আসন দেয়া সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে ১৪২ জন রোগীকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। আর বাকি ৩৪ জন অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। তবে সেন্ট্রাল লাইনেও অক্সিজেন সংকট রয়েছে।

ডা. আসিফ আরো জানান, কোভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য এখন প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন।

‘জাগ্রত মানবিকতা’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা জানান, গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে শতাধিক রোগীর জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন। রাতদিন সমানে ফোন আসে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য। এত রোগীর জন্য অক্সিজেন সেবা দিতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিন জানান, ঈদের পর থেকে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন রোগী আসছে। আসন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিতে চেষ্টা করছি।

কুমিল্লায় কেন এত রোগী বাড়ছে এমন প্রশ্নে ডা. মহিউদ্দিন জানান, প্রথমে জ্বর সর্দি হলে কেউ টেস্ট করে না। পরে যখন শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় তখন হসপিটালে আসে। আগে থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর সংখ্যা এত হতো না। পাশাপাশি অসচেতনতার কারণে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ৯০ আসনের বিপরীতে ১শ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে।

সংবাদ সারাদিন