সারাবেলা প্রতিবেদন, বগুড়া
হাটে প্রচুর সবজি। ক্রেতা সেতো হাতে গোনা। কৃষক হতাশ। সবজিতে মিলছে না দাম। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ক্রেত-বিক্রেতার হাকডাকে সরগরম থাকে বগুড়ার পাইকারি এই সবজির বাজার। গেল পনেরো দিনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবজিরই দাম মিলছে না একেবারেই। সবজির দামে উৎপাদন খরচ তো দুরের কথা ভ্যান ভাড়াই তুলতে পারছেন না কৃষক। মুলাতো সেতো বিক্রির অযোগ্য সবজি হয়ে উঠেছে। অবিক্রিত মুলা ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি সরেজমিনে বগুড়ার মহাস্থান হাট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সবজি বেচাকেনার ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় পা্ইকারি বাজার এটি। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বাজারটির অবস্থান। তবে জায়গা কম হওয়ায় মহাসড়কের দুই পাশের বেশ খানিকটা এলাকাজুড়ে বসে এই বাজার।
সবজি বলতে যা কিছু বোঝায়- তার সবই তরতাজা পাওয়া যায় এ বাজারে। তাই তরতাজা সবজি পেতে চাইলে যে কেউ এ বাজারে আসতে পারেন। দামও বেশ কম।
পুরো সপ্তাহজুড়েই এখানে বাজার বসে। সকাল থেকে সারাদিন ধরে চলে বেচাকেনা। এখানে আলু, মূলা, বেগুন, কাঁচা ও শুকনো মরিচ, টমেটো, গাঁজর, শিম, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজের ফুল, পালং ও লাল শাক, করলা, ঝিঙা, বরবটি, শসা, খিরাই, শোলুকপাতা, ছাচি লাউ, মিষ্টি লাউ, আদা, রসুনসহ সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়।
এখান থেকে পাইকাররা রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক সবজি নিয়ে যান। তবে গেল কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসের কারণে এখন দেশব্যাপী চলছে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। তারই প্রভাব পড়েছে বাজারে।
মহাস্থান হাটে সবজি বিক্রি করতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ক্রেতার দেখা মিলছে না।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মেঘা খর্দ গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম। নিজের জমিতে চাষ করা পাঁচ মণ বেগুন বিক্রি করতে এসেছেন মহাস্থান হাটে। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রোদে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। কিন্তু এই চার ঘণ্টায় বিক্রি করতে পারেননি এক কেজি বেগুনও। একই অবস্থা গাবতলী উপজেলার দাড়াইল গ্রামের কৃষক আব্দুল কাফীর। তিনি নিয়ে এসেছেন ৯ মণ টমেটো। ৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে পারছেন না কষ্টে আর অর্থে ফলানো টমেটো।
মহাস্থান পাইকারি হাট ঘুরে আরও দেখা গেছে, কাঁচামরিচ ৬ টাকা কেজি, বেগুন ২ থেকে ৪ টাকা, পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পিস, বাঁধাকপি ১ টাকা পিচ, করলা ২০ টাকা কেজি, লাউ ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পিচ, গাজর ৮ টাকা কেজি, টমেটো ৫টাকা থেকে কেজি, সজনা ডাটা ১০০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৩০ টাকা কেজি, পটল ৩০ টাকা কেজি, লাল শাক ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, বাইরের জেলার কোনও ব্যাপারী সবজি কিনতে না আসায় সবজির দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেকের জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বেগুন, টমেটো, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।
শিবগঞ্জ উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের কৃষক আজাদুর রহমান বলেন, চৈত্র মাসে বগুড়া অঞ্চলের মানুষ মুলা খেতে চায় না। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে এ সময় মুলার ব্যাপক চাহিদা থাকে। গতবছর চৈত্র মাসে ১১শ টাকা মণ দরে মুলা বিক্রি করেছিলেন। এ কারণে এবারও কয়েক বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছেন। কিন্তু, এবার করোনাভাইরাসের প্রভাবে মুলা বিক্রি করতে পারছেন না।আজাদুর রহমান মুলা বিক্রি করতে পারলেও অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এদিকে পাইকারি বাজারে সবজির দাম একেবারে কম হলে শহরের খুচরা বাজারগুলোতে ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানি কমের অজুহাতে তারা বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন।
