করোনা পরীক্ষা ট্রাম্পের কাছে ‘শাঁখের করাত’ বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে ‘উদ্বিগ্ন’ চীন

|| বার্তা সারাবেলা ||

এবার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষাকে “শাঁখের করাত” বললেন মার্কিন অধিপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বললেন, “পরীক্ষা কমিয়ে দাও।” খবর রয়টার্সের। রোববার ওকলাহোমার টুলসায় বিওকে সেন্টারে উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশে নির্বাচনী বক্তৃতা করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে “শাঁখের করাত”। না করলেও সমস্যা। আবার করলেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে দৃশ্যমান হয়। তাই তিনি পরীক্ষার মাত্রা কমিয়ে আনতে বলেছেন।

এদিকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা ও জনসচেতনা দুটোতেই উদ্বেগ জানিয়েছেন সফররত চীনা বিশেষজ্ঞরা। প্রাণঘাতি এই ভাইরাস মোকাবেলায় সুপারিশ উল্লেখ করে সরকারকে চারটি প্রতিবেদন দিয়েছেন তারা। শনিবার রাজধানীতে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ডিক্যাবের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলাপনে তারা তাদের সহায়তা সুপারিশ তুলে ধরেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিজ দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিতে চীনা বিশেষজ্ঞের এই দলটি দুই সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশে আসেন।

করোনার নমুনা পরীক্ষা ট্রাম্পের “শাঁখের করাত”

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ আবারো বাড়তে থাকায় নমুনা পরীক্ষার মাত্রা কমিয়ে দিতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, এটি হচ্ছে “শাঁখের করাত”।

এ পর্যন্ত আড়াই কোটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, এই সংখ্যা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের থেকে বেশী।
শনিবার ওকলাগহোমার টুলসাতে নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেন, “এই মাত্রায় পরীক্ষা চলতে থাকলে আরো বেশী মানুষ শনাক্ত হবে, দৃশ্যমান হবে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। তাই আমি আমার লোকদের বলেছি, অনুগ্রহ করে পরীক্ষার গতি কমিয়ে দিন।”
হাজারো মানুষের এই ভোটসমাবেশে ট্রাম্পের নিজের মুখেতো ছিলই না, মাস্ক ছিল না বেশীর ভাগ মানুষের মুখে।

তবে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের প্রেসিডেন্ট আসলে হাস্যরস থেকেই এমনটা বলেছেন। কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত আড়াইকোটির বেশী নমুনা পরীক্ষা করিয়েছি। যা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের থেকেও বেশী।”

ট্রাম্প বলেন, চীন ও ইউরোপ থেকে কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিয়ে তিনি লাখো মার্কিনির জীবন বাঁচিয়েছেন। কিন্ত তার ভাষায় “র্যা ডিকেল ফেক নিউজ’ মিডিয়া এ নিয়ে তাকে কোন কৃতিত্বতো দেয়ইনি, বরং তার ‘খুঁত’ ধরতেই ব্যস্ত থাকছে তারা।

মাঝখানে সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কমতে থাকলেও আবারো তা বাড়তে শুরু করেছে গোটা যুক্তরাষ্ট্রেই। বিশেষ করে দেশটির দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে সংক্রমণমাত্রা বেশ বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে পরীক্ষার হার সেই তুলনায় অনেকই কম।

পরীক্ষা পদ্ধতিকে এই ভাইরাস সংক্রমণবিস্তার রোধে একটি কার্যকর উপায় জানিয়ে তারা বলছেন, করোনা ঠেকাতে পরীক্ষা করতেই হবে। এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কেননা সংক্রমণসংখ্যা জানা গেলেই এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষ সচেতন হবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরু থেকেই এই ভাইরাসের প্রকোপ ও ভয়াবহতা নিয়ে ‘হাস্যরস’ ও ‘অযৌক্তিক’ কথাবার্তা বলে আসলেও রয়টার্স/ইপসসের সবশেষ জরিপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৬ শতাংশ মানুষ করোনার সংক্রমণ বিস্তার নিয়ে সাংঘাতিক উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশে সংক্রমণ ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন

সম্প্রতি ঢাকায় আসা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও এর বিস্তৃতি ঠেকাতে নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও কৌশল বিনিময় করতে ঢাকায় আসেন । দুই সপ্তাহের সফরশেষে এদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি ও এর চিকিৎসাসেবা নিয়ে যার পর নাই উদ্বেগ জানিয়েছেন তারা।
সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ রেখে চারটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন চীনা বিশেষজ্ঞদল।

রোববার রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চীনা দূতাবাসের উপ প্রধান হুয়ালং ইয়ান বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আরো ‘কঠোর’ ও ‘কার্যকর’ ভাবে লকডাউন আরোপ করতে হবে।

তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমণ এখনো বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছয়নি। এবং এটা বলা কঠিন যে কখন কোন সময়ে এর বিস্তৃতি চূড়ান্ত অবস্থায় যাবে। সাধারণ মানুষ সাংঘাতিক রকমের অসচেতন। যা কি না চীনা বিশেষজ্ঞদের হতাশ করেছে।”

কমহারে নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়ে ইয়ান বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চিকিৎসক ও চিকিৎসেবা দিচ্ছেন এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে অনেক জায়গাতেই নেই কোন পরীক্ষাগার। তাই তাদেরকে নমুনা সংগ্রহের পর তা ঢাকায় পাঠিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় ফলাফলের জন্য।”

অবশ্য সোমবার চীনের এই বিশেষজ্ঞদলকে বিদায় জানাতে গিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বাংলাদেশের কাজে চীনা দল ‘সন্তুষ্ট’ হয়েছে। তবে আরও কিছু জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে বলেও প্রতিনিধি দল সরকারকে জানিয়েছেন। আমরাও সামনের দিনগুলোতে চিহ্নিত জায়গাগুলো নিয়ে আরও কাজ করব।”

সংবাদসূত্র : রয়টার্স ও এপি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন