|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করেনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট অসুখ কোভিড ১৯ এর দেশে গেল ২৪ ঘন্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরো ৫৭১ জন। এনিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ হাজার ২৩৮ জনে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে মারা গেছে আরও ২ জন। মোট মৃতের ১৭০ জন। গেল একদিনে সুস্থ হয়েছেন ১৪ জন জন। সর্বমোট ১৭৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এদিকে দেশে আরও দুটি হাসপাতালসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এগুলো হলো- কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসম। এনিয়ে দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার বৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ৩১টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা শুক্রবার দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত একদিনে মারা যাওয়াদের মধ্যে এক জন পুরুষ, এক জন নারী। যাদের একজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, অন্যজন ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। একজন ঢাকার বাসিন্দা, অন্যজন ঢাকার বাইরের।
নমুনা পরীক্ষার অগ্রগতি জানাতে গিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩১টি ল্যাবে এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে। এসব ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৫৭৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
বুলেটিনে জানানো হয়, গত এক দিনে আইসোলেশনে আনা হয়েছে ১৭৫ জনকে, এনিয়ে বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৫২২ জন। হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ২ হাজার ৩৮১ জন।
রোগীর সুস্থ হওয়া প্রসঙ্গে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘কোভিড-১৯ আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির লক্ষণ-উপসর্গগুলো মিলিয়ে যাওয়ার পর দুই দফা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম পরীক্ষার এক সপ্তাহ পরে আরও একটি পরীক্ষা হয়। পরপর দুটি পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ বলা হয়।
নাসিমা সুলতানা বলেন, “শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৮০০ জন সুস্থ আছেন। মানে তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ-উপসর্গ নেই। কিন্তু পরপর তাদের দুটি টেস্ট করতে হবে। সে টেস্টে কারও হয়তো একটি টেস্ট হয়েছে, একটি টেস্ট এখনও হয় নাই। কারও হয়তো একটি টেস্টও হয় নাই। কারণ এখানে সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। লক্ষণ-উপসর্গ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হওয়ার পরে আমরা রিপিট বা পুনরায় টেস্টগুলো করি।” তিনি জানান, সুস্থ ৮০০ জনের মধ্যে কেউ হাসপাতাল, কেউবা আবার রয়েছেন বাড়িতে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বাড়িঘরে হামলা, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার খবর এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের ‘মানবিক’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, “যারা শনাক্ত হন, তারা দোষী ব্যক্তি না, তারা কোনো অপরাধী না। আবেদন রাখছি সকলের প্রতি… যারা কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন, শনাক্ত হচ্ছেন, তাদেরকে কোনোভাবেই হেয় করবেন না।”
তিনি বলেন, “কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন, তারা হয়ত কেউ অসুস্থ নন। যারা সনাক্ত হয়েছিলেন, তাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে হয়ত তাদেরকে আলাদা কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ইনাদের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ কারোরই নাই। লক্ষণ-উপসর্গ থাকলে আমরা শনাক্ত করতে পারতাম। অন্য যে কোনো অসুখের মতো এ অসুখেও সুস্থ হয়ে যান রোগী। আমরা আগেও বলেছি, আশি ভাগ মানুষের মধ্যে মৃদু লক্ষণ-উপসর্গ থাকে। বাকি তিন থেকে পাঁচ শতাংশ রোগীর মধ্যে সিরিয়াস লক্ষণ-উপসর্গ থাকে। তাদের হাসপাতাল বা আইসিইউ সাপোর্ট লাগে।”
দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই অনেকে পথে বেরিয়ে এসেছেন, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। তাদের সতর্ক করে দিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, “যে কোনো মুহূর্তে আপনি নিজেও কোভিড আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ সামাজিকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। আজকে যে নেগেটিভ আছে, কালকে সে পজিটিভ হবে না, এটার কোনো গ্যারান্টি আমরা দিতে পারি না। “